নয়াদিল্লি: কর্মক্ষেত্রে অফিস এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পেশাদারদের জন্য এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। দেশের অফিস, কলকারখানা ফেরত কর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রগুলি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলিতে কর্মসংস্থানকারী গণমাধ্যমগুলি ইতিমধ্যেই এর একটা পরিসংখ্যান তৈরির কাজ শুরু করেছে৷ যেখানে করোনা পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। এমনই এক অনলাইন মাধ্যম কর্মসংস্থান মাধ্যম লিংকডইন এবিষয়ে আলোকপাত করেছে।
দেশে কর্মসংস্থানের তুলনায় কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা বেশি একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে সেই বেকারত্বের সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে প্রতিদিন একাধিক সংস্থার কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে। লিংকডইন-এর পরিসংখ্যান বলছে, কর্মক্ষেত্রগুলিতে প্রতিযোগিতা ছ’মাস আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে, লিঙ্কডইনে প্রতি চাকরির জন্য পোস্ট করা গড় আবেদনের সংখ্যা জানুয়ারিতে প্রায় ৯০ থেকে বেড়ে জুন মাসে ১৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। মার্চের-শেষের দিকে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে হতাশা যে আরও চরমে পৌঁছেছে এই তথ্য তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বহু সংস্থা ব্যয় কাঠামো বজায় রাখতে কর্মী ছাঁটাই করছে এবং বেতনও কাটছে। করোনা পরিস্থিতির জোর ধাক্কায় দুর্দশাগ্রস্ত শিল্পক্ষেত্রগুলিতে কর্মীদের বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
লিঙ্কডইনে অর্থনৈতিক গ্রাফ টিমে অ্যাপ্যাক(এশিয়া পেশিফিক অ্যাক্রেডিটেশন কোঅপরেশন ইনকর্পোরেটেড) এর শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ পেই ইং চুয়ার কথায়, এই চরম সংকটের মধ্যেই সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ের ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় বেশ কয়েকটি রাজ্যে ফের লকডাউন শুরু হয়েছে। এই সমস্ত অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহগুলিতেও পরিস্থিতি মোটামুটি একই থাকবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। গ্রাফের পর্যবেক্ষণ কাজের বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে প্রকৃত সাম্প্রতিক তথ্য সরবরাহ করে। বর্তমানে ভারতে লিঙ্কডইন ব্যবহারকারী ৬৯ মিলিয়নেরও বেশি এবং বিশ্বব্যাপী ৫০ মিলিয়নেরও বেশি সংস্থা এই সাইট ব্যবহার করে যা একে কর্মপ্রতিষ্ঠানগুলিতে চাকরির দেওয়ার ক্ষেত্রে এর গ্রহনযোগ্যতার মাপকাঠি।
তবে এর মধ্যেও সুখবর মে এপ্রিলের শুরু থেকে জুনের শেষ সময়ের মধ্যে, লিংকডইনে নিয়োগের হার ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে,বিভিন্ন ক্ষেত্রে থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে সিএমআই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি)-র বেকারত্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যা এই প্রবণতার উর্দ্ধমুখী দিকটি তুলে ধরছে সেখানে জুলাই মাসে ভারতের বেকারত্বের হার, প্রায় এপ্রিলের ২৪% এর তুলনায় আরও ৮% এরও নিচে পৌঁছে গিয়েছে।
লিঙ্কডইন-এর বিশ্লেষণ বলছে যে তারা চাকরিপ্রার্থীরা কীভাবে কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন করতে দেখছেন। আশ্চর্যজনকভাবে বেশি প্রভাবিত শিল্পে যারা কাজ করছেন তারা চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। লিঙ্কডইন জানিয়েছে, করো না পরিস্থিতির আগের তুলনায় বিনোদন ও ভ্রমণের মতো ক্ষেত্রগুলিতে যা বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির জেরে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত এমন ক্ষেত্রে পেশাদার চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে কাজের ক্ষেত্রপরিবর্তনের সম্ভাবনা ৬.৮ গুণ বেড়েছে। খুচরা বাজারে পেশাদারদের অন্য শিল্পে যোগ দেওয়ার মানসিকতা ২.৪ গুণ বেড়েছে যেখানে বিনোদন এবং ভোক্তা সামগ্রী ক্ষেত্র থেকে মানসিকতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা ১.৩ গুণ বেশি।
লিঙ্কডইন-এর ডেটায় উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যাচ্ছে যে বর্তমানে কর্মক্ষেত্র হিসেবে প্রার্থীদের চাহিদার তালিকায় যে প্রথম পাঁচটি কাজ রয়েছে সেগুলি হল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার, বিজনেস অ্যানালিসিস্ট, সেলস ম্যানেজার ও কনটেন্ট রাইটার।