চিনের আগ্রাসন রুখতে আরও শক্তিশালী প্রতিরোধের প্রয়োজন ভরতের

চিনের আগ্রাসন রুখতে আরও শক্তিশালী প্রতিরোধের প্রয়োজন ভরতের

 

নয়াদিল্লি: পুরুষ আধিপত্য আর নৃশংসতা ‘চপস্টিক’ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য৷ পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিশেষত মিডল কিংডম এখনও শক্তির কাছে নাথা নুইয়ে রয়েছে৷ যে অঞ্চলের ভাগডোর রয়েছে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর হাতে৷ আকসাই চিন অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে চিনা আগ্রাসনের নীতি বোঝার জন্যও এই সংস্কৃতিকে বুঝতে হবে৷ 

এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ৩০ বছরের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করে চিনা কমান্ডার ইন চিপ কেন সর্বশক্তি নিয়ে লাল ফৌজকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পাঠিয়েছিলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা খানিকটা মুশকিল৷ ১৯৬২ সালের উত্তরাধিকার হিসাবে এখনও দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বয়ে চলেছে ভারতীয় সেনা৷ কিন্তু গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় গালওয়ান উপত্যকায় সেই মিথ ভেঙে দিয়েছিলেন ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কর্নেল সন্তোষ বাবু৷   

কেন একটা দেশ তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে, বিশেষত যখন সে তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি৷ এমনকী বিশ্বজুড়ে তার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকেও চ্যালেঞ্জ করেনি৷ ভারত আদতে চুপ থাকার কৌশল নিয়েছে৷ নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং ভুটানের কানে বেজিং যে ক্রমাগত কুমন্ত্রণা দিয়ে চলেছে, সে বিষয়ে খুব ভালোভাবেই অবগত নয়াদিল্লি৷ 

চিন বরাবরই চেয়ে এসেছে আধিপত্য ফলাতে৷ তাদের এই ঔদ্ধত্য নিয়ে মুখ খোলেনি অধিকাংশ দেশই৷ চিনের নৌবাহিনী যখন বিতর্কিত সেনকাকু দ্বীপে টহল দিতে শুরু করেছিল, তখন কোনও বচসায় যায়নি জাপান৷ দক্ষিণ চিন সাগরে যখন ভিয়েতনামের নৌকা ডুবে গেল, তখন চুপ থাকল তারাও৷ কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ঔদ্ধত্য বৃদ্ধির পর আমেরিকার কাছে সাহায্য চায় এশিয়ান দেশগুলি৷ 

চিনা সেনা যখন গালওয়ান উপত্যকায় ঢুকে পড়ে তখন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং জেনারেল জাও জঙ্গকি আশা করেছিলেন একই ভাবে চুপ থাকবে ভরত৷ কিন্তু গোটা খেলাটা ঘুরিয়ে দেন কর্নেল সন্তোষ বাবু এবং তাঁর জওয়ানরা৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জনগণের মনোভাব বোঝার পরই তড়ঘড়ি চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়৷ শুধু তাই নয়, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানেকে সঙ্গে নিয়ে লাদাখের সেনাঘাঁটিতে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী৷ খতিয়ে দেখেন সীমান্ত পরিস্থিতি৷ 

দু’দেশের তরফে সামরিক পর্যায়ে বারবার বৈঠকেও যখন সীমান্ত সমস্যা মেটানো সম্ভব হয়নি, তখন ময়দানে নামেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল৷ চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠকের পর গালওয়ান উপত্যকা থেকে পিছু হটে লাল ফৌজ৷ কিন্তু ৩,৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলএসি-র পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত জটিল৷ যে কোনও সময় খেলা বদলে যেতে পারে৷ আগামী দিনে যে কোনও সময় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ফিরে আসতে পারে চিন সেনা৷ দাবি করতে পারে বেজিংয়ের প্রতি ভারতের আনুগত্য৷ নয়াদিল্লিকে এই বিষয়ে আরও দৃঢ় থাকতে হবে৷ আরও সতর্ক থাকতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 11 =