কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় সফল্যের পথে ভারত

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় সফল্যের পথে ভারত

নয়াদিল্লি:  বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল৷ এই সাফল্য অর্জনের দৌড়ে সামিল হয়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ৷ যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ভারতও৷ এখন শুধুই অপেক্ষা সফলতার৷ করোনা ভ্যাকসিনের সাফল্যের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিশ্বের ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ৷  

এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ১৫৫টিরও বেশি করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে৷ যার মধ্যে ২৩টি ভ্যাকসিন মানব দেহে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে৷ অন্যদিকে, পশুর শরীরের প্রয়োগের স্তরে রয়েছে ১৩৫টি ভ্যাকসিন৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫টি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে৷ এই ভ্যাকসিনগুলি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ তাঁদের শরীরে এর প্রভাব কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দ্বিতীয় ফেজে পৌঁছে গিয়েছে ১১টি ভ্যাকসিন৷ এই পর্যায়ে কয়েকশো মানুষকে একাধিক দলে ভাগ করে তাঁদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছেন বিজ্ঞানীরা৷ ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশ মানুষকে যদি এই ভ্যাকসিন করোনা সংক্রমণ থেকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়, তাহলে এটি কার্যকরী হিসাবে বিবেচনা করে হবে৷ 

অন্যদিকে, সারা বিশ্বে ইতিমধ্যে ৪টি ভ্যাকসিন পৌঁছে গিয়েছে তৃতীয় ফেজে৷ এই পর্যায়ে হাজারেরও বেশি মানুষের শরীরের এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ আপাতত ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এই ভ্যাকসিন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কতখানি কার্যকর, নজরে এখন সেটাই৷ চতুর্থ ফেজের পর বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখবে৷ সবকিছু ঠিক থাকলে সেই ভ্যাকসিনে অনুমোদন দেওয়া হবে৷ তবে জরুরি পরিস্থিতিতে এই সকল ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হতেও পারে৷ 

এই মুহূর্তে বিশ্বে পাঁচ ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে৷ প্রথমটি হল জেনেটিক ভ্যাকসিন৷ যার সাহায্যে করোনাভাইরাসের জিন ব্যবহার করে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে৷ দ্বিতীয়টি হল ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন৷ এতে করোনাভাইরাসের জিনগুলি মানবদেহের কোষে স্থানান্তরিত করা হয়৷ এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয় কিনা, তা দেখা হচ্ছে৷ এই ভ্যাকসিনের উপর কাজ করছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷   

তৃতীয়টি হল প্রোটিন ভিত্তিক ভ্যাকসিন৷ যেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রোটিনগুলি ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করার জন্য ব্যবহৃত হবে৷ চতুর্থ ভ্যাকসিনটি হল ‘হোল ভাইরাস ভ্যাকসিন’৷ যার মাধ্যমে একটি দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাস শরীরে ইনজেক্ট করা হয়৷ এটি সনাক্ত করার পরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে এই ভ্যাকসিন৷ আমাদের দেশে এই ধরনের ভ্যাকসিনের উপরেই কাজ করছে ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল এফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)৷ এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালও শুরু হয়ে গিয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক ফলাফলই মিলেছে বলে খবর৷ পুনঃপ্রবর্তিত ভ্যাকসিনগুলি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ যার মাধ্যমে অন্য যে কোনও রোগের জন্য ইতিমধ্যে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে  কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + 17 =