IIT দিল্লির অধ্যাপনা ছেড়ে আদিবাসী গ্রামে সমাজসেবায় রঘুরাম রাজনের স্যার

IIT দিল্লির অধ্যাপনা ছেড়ে আদিবাসী গ্রামে সমাজসেবায় রঘুরাম রাজনের স্যার

ভোপাল: মাথায় উস্কোখুস্কো চুল। গাল ভর্তি কাচা-পাকা দাড়ি। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা লুঙ্গি৷ আর পায়ে টায়ারের তৈরি চটি৷ মধ্যপ্রদেশের বেতুলের আদিবাসী এলাকায় ঘুরে ঘুরে গাছ লাগানো প্রায় ভবঘুরের বেশে থাকা ওই লোকটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি  দিল্লি আইআইটির প্রাক্তন প্রফেসর আলোক সাগর। যাঁর হাত থেকে বেরিয়েছেন একের পরে এক কৃতী ছাত্র। তার মধ্যে অন্যতম হলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন৷ 

৩৪ বছর ধরে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন আলোক সাগর৷ কিন্তু ২০১৬ সালের মে মাসে বিধানসভা উপনির্বাচনের সময় নগ্নগাত্র-কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত আলোক সাগরকে গ্রামের মধ্যে ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসনের৷ নির্বাচনে তিনি গোল পাকাতে পরেন সন্দেহে এলাকা থেকে চলে যেতে বলা হয় তাঁকে৷ অবশেষে বাধ্য হয়েই তিনি ৩৪ বছর ধরে লুকিয়ে রাখা পরিচয় প্রকাশ করেন৷ যিনি আসলে ছিলেন দিল্লি আইআইটির প্রাক্তন প্রফেসর আলোক সাগর৷ তাঁর সার্টিফিকেট দেখে পুলিশের চক্ষু চরকগাছ৷ যাঁর ঝুলিতে রয়েছে দিল্লি আইআইটি এবং মার্কিন মুলুকের পিএইচডি ডিগ্রি৷ দেশ-বিদেশের সাতটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। 

দিল্লিতে জন্ম আলোক সাগরের৷ তিনি ১৯৭১ সালে আইআইটি দিল্লি থেকে ইকেলকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক এবং ১৯৭৩ সালে এম-টেক করেন৷ এরপর তিনি আমেরিকায় পাড়ি দেন৷ সেখানে হিউসস্টোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন৷ দেশে ফিরে ১৯৮০ সালে আইআইটি দিল্লিতে অধ্যাপনা শুরু করেন৷ সেই সময়ই আলোকের ছাত্র ছিলেন রঘুরাম রাজন। কিন্তু মন টেকেনি৷ দিল্লির বিলাসবহুল জীবনের মোহ ত্যাগ করে ১৯৮২ সালে আইআইটি-র শিক্ষকতা থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন মধ্যপ্রদেশের কোমাচু নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে৷ আদিবাসী শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন এই এলাকার মানুষগুলোর জন্য। 

আলোক সাগরের বাবা ছিলেন আইআরএস অফিসার৷ মা ছিলেন দিল্লির মিরান্ডা হাউজ কলেজের ফিজিক্সের অধ্যক্ষা৷ তাঁর ভাই অম্বুজ সাগর আইআইটি দিল্লির প্রফেসর৷ এমন এক পরিবারের সদস্য হয়ে  আদিবাসীদের মধ্যে থেকে সমাজসেবা করা সহজ কথা নয়৷ তবে পুরনো জীবনের কথা কখনওই বলেন না তিনি৷ নিজেকে কারোর প্রেরণা বলে মানতেও নারাজ৷ উনি মনে করেন, কোনও ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে চিন্তাভাবনা গড়ো ওঠা সঠিক নয়৷  

 

আলোক জানান, প্রথম থেকেই তাঁর পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র অর্থ সাহায্য দিয়ে এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাননি তিনি। উল্টে তাঁদের আরও কাছ থেকে দেখার জন্য, তাঁদের অসুবিধাগুলোকে কাছ থেকে বোঝার জন্য স্বচ্ছায় এই জীবনকে বেছে নেন। শোনা যায় এখনও পর্যন্ত তিনি নাকি ৫০ হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন৷ তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত গ্রামবাসীরা বন্ধ করেছে কাঠ কাটার কাজ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + twelve =