নয়াদিল্লি: পুলওয়ামার বদলা হালাকোট, মুজফফরাবাদ, চাকোতি। আর এই বদলা এল মিরাজ-২০০০ এর হাত ধরেই। তারপরই মানুষের মুখে মুখে ফিরছে মিরাজের নাম। প্রায় তিন দশক ধরে ভারতীয় বাযুসেনার অন্যতম যুদ্ধবিমান এই মিরাজ-২০০০। এর ডিজাইন তৈরি হয়েছিল ১৯৭০-র শেষ দিকে। ১৯৭৮-এর ১০ মার্চ প্রথম আকাশে ওড়ে এই যুদ্ধ বিমান। ভারত ১৯৮২ সালে ৩৬টি এক আসনের এবং ৪টি দুই আসনের মিরাজ অর্ডার দেয়। ভারতের হাতে আসে ১৯৮৫-তে। পাকিস্তান তার পাল্টা হিসেবে আমেরিকার লকহিড মার্টিন থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনে।
শুরুতে ভারতীয় বিমানবাহিনী এর নাম দিয়েছিল বজ্র। আমেরিকার দেওয়া পাকিস্তানের এফ-১৬ জেটের মোকাবিলায় মিরাজই সেরা অস্ত্র। বিমানটি ফ্রান্সের বায়ুসেনার জন্য তৈরি করে ড্যাসল্ট নামে অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা। তারপর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভারতের হাতে আসে বিমানটি। এই সংস্থাটির কাছ থেকেই ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমানও কিনেছে ভারত। সাতের দশকে তৈরি হলেও সদ্য আপগ্রেড করা হয়েছে যুদ্ধবিমানগুলিকে। ফলে আরও ঘাতক হয়ে উঠেছে মিরাজ। মূলত বোমারু বিমান হিসেবেই কাজ করে মিরাজ-২০০০। প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কিলোগ্রাম ওজনের অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা নিয়ে উড়তে সক্ষম এই বিমানটি। প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের রেডিয়াসে হামলা চালাতে সক্ষম মিরাজ। সব থেকে বড় কথা আণবিক বোমা বহনে সক্ষম এটি। এছাড়াও যেকোনও আবহাওয়ায় ও রাতে হামলা চালাতে পারে মিরাজ। এটিতে রয়েছে মারাত্মক শক্তিশালী রেডার। যার ফলে লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারে সহজেই, ডপলার বিমিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটিতে থাকা যে কোনও বস্তুর নিখুঁত মানচিত্র এঁকে ফেলতে সক্ষম। শত্রু দেশের রাডারকে ফাঁকি দিয়ে তাদের বায়ুসীমায় প্রবেশ করে বোমাবর্ষণে, এর জুড়ি মেলা ভার। শত্রু পক্ষের বিমানকে মাঝ আকাশে ধবংস করতে এতে রয়েছে ‘অটো ক্যানন’ বা কামান।
পাশাপাশি রকেট থেকে শুরু করে লেজার গাইডেড বম্ব বহন করতে পারে বিমানটি। নিখুঁতভাবে আকাশে অনেক উঁচু থেকেই শত্রুর শিবিরে আছড়ে পরে লেজার রশ্মি নিয়ন্ত্রিত বোমাগুলি। এই জেটের চালকের হেলমেটের মধ্যেই থাকে ডিসপ্লে। যার ফলে সুপারইমপোজড রাডার ডেটা দেখতে পারেন তিনি। ককপিটে ডিসপ্লে থাকার প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও শুধুমাত্র মাথা ঘুরিয়েই মিসাইলগুলিকে অন্য জঙ্গিবিমানের দিকে চুঁড়তে পারেন পাইলট। এতে রয়েছে ‘থেইলস রাডার’। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্ত্রের নিশানায় চলে আসে শত্রু পক্ষের বিমান ও মিসাইল। কারগিল যুদ্ধে টলোলিং ও বাটালিক সেক্টরে পাকিস্তানের ত্রাস হয়ে উঠেছিল এই মিরাজ। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০০টি মিরাজ বিশ্বের ন’টি দেশের বায়ুসেনার হাতে রয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের হাতে রয়েছে প্রায় ৪০টি মিরাজ যুদ্ধবিমান। ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের পর এই প্রথম ভারত বিমান হানা চালাল। কার্গিল যুদ্ধের সময়ও তৎকালীন বাজপেয়ি সরকার বিমান হানা চালায়নি।