নয়াদিল্লি: করোনা পরিস্থিতিতে দেশজোড়া লকডাউনে সংকটে পড়েছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক, দিনমজুর এবং চালচুলোহীন মানুষের দল৷ তাঁদের কাছে খাবার নেই, মাথার উপর ছাদ নেই, নেই টাকাকড়ি৷ এই সংকটের মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় মানুষগুলোর দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বহু সহৃদয় ব্যক্তি৷ নিজেদের জীবনের পরোয়া না করেই কাজ করে চলেছেন তাঁরা৷ মানবিকতার নজির গড়ে অসহায় মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী, রেশন, টাকাপয়সা৷ দিচ্ছেন মাথা গোঁজার আশ্রয়৷ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তো আছেই, পাশাপাশি না খেয়ে মরতে বসা মানুষের প্রাণ বাঁচানোর মন্ত্র নিয়ে ময়দানে নেমেছেন দেশের একাধিক সিভিস সার্ভিস অফিসাররাও৷ সমানতালে চালাচ্ছেন সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ৷ মহারাষ্ট্র থেকে মেহালয়, এই অফিসাররা কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে৷
আইএএস স্বপ্নিল টেম্বে, মেঘালয়- মানবিক কাজের জন্য বরাবরই পরিচিত ইস্ট গারো হিলসের জেলা শাসক স্বপ্নিল টেম্বে৷ ২০১৫ সালে পোস্টিং হয় তাঁর৷ এর পর থেকেই সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি৷
টেম্বে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে কোভিড-১৯ পজেটিভের কোনও রিপোর্ট নেই৷ তবে গত দুই সপ্তাহ ধরেই রাজ্যে কারফিউ চলছে৷ ফলে ক্রমেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন অসহায় মানুষগুলো৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেই সরকারিভাবে শ্রম দফতরের নথিভুক্ত নন৷ তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই৷ ফলে সরকারের রেশনের সুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত৷
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই সাহায্য চেয়ে টেম্বের দফতরে হত্যে দিতে শুরু করেছেন ওয়েস্ট গারো হিলসের বহু দরিদ্র মানুষ৷ তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন টেম্বেও৷ অসহায় পরিবারগুলির মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন তিনি৷ পাশে দাঁড়িয়েছেন অসম থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের৷ লকডাউনের জেরে তাঁরা আটকে পড়েছেন মেঘালয়ে৷ স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছিক চাদম্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তিনি৷ যাঁরা তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে চাল, ডাল এবং নুনের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে৷
টেম্বে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে একজন প্রতিবন্ধী মানুষ দেখা করেছিলেন৷ যাঁর একটি ছোট মোবাইল মেরামতের দোকান আছে৷ লকডাউনের জেরে যা এখন বন্ধ৷ ফলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে তাঁর৷ এর পরই তাঁর মতো অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষদের খোঁজ শুরু করি৷ লকডাউনে সমস্যার মধ্যে পড়া মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে৷’’
আইআরএস ডা. মেঘা ভার্গভ, মুম্বই- করনোয় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যনগরী৷ মুম্বইয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭০০ জন৷ করোনা পরিস্থিতিতে বাণিজ্যনগরীতে আটকে পরা পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলির জন্য ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মুম্বইয়ের ডেপুটি ইনকামট্যাক্স কমিশনার তথা প্রাক্তন দন্ত্য চিকিৎসক ডা. মেঘা ভার্গভ৷ তাঁর নিজস্ব এনজিও ‘সমর্পণ’-এর মাধ্যমে ২,৬৬৬ জনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার ও স্যানিটারি কিট৷ ডা. ভার্গভ বলেন, ‘‘২০১৭ সালে একদল চিকিৎসক ও সিভিল সার্ভেট মিলে এনজিওটি তৈরি করেছিলেন৷ এই দলে ছিলেন আমার বোন ডা. রুমা ভার্গভ, আমার বন্ধু রাহুল টাগারে এবং আইআরএস অফিসার সুরেশ কাটারিয়া৷ আমরা দুটি বিষয়ের উপর মূলত কাজ করি৷ শিক্ষা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা৷ এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং উত্তরাখণ্ডের ১০ হাজারেরও বেশি গ্রামবাসী ও আদিবাসী মানুষের জন্য কাজ করতে পেরেছি৷’’
করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিভিন্ন দফতর, মুম্বই পুলিশ এবং বৃহন্নমুম্বই মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে দিন রাত এক করে কাজ করে চলেছেন ডা. ভার্গভ৷ দরিদ্র মানুষগুলোর কাছে খাবার ও স্যানিটারি কিট পৌঁছে দেওয়ার এক বিশাল কর্মযজ্ঞে সামিল তিনি৷
পাশাপাশি রাস্তায় নেমে কাজ করা পুলিশকর্মীদের জন্য ১ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ১,৩০০ মাস্ক সরবরাহ করেছেন ডা. ভার্গভ৷ একইভাবে তাঁর এনজিও ১০ হাজার মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কাজ করে চলেছে৷ প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এক হাজার টাকার খাবার৷ এর মধ্যে রয়েছে ৫ কেজি গম, ৩ কেজি চাল, ৩ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ লিটার রান্নার তেন, ১ কেজি নুন এবং ২০০ গ্রাম করে হলুদ, লঙ্কার গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো ও অন্যান্য কিছু মশলা৷
আইআরএস নিশান্ত কে, বেঙ্গালুরু- ভারতের মধ্যে প্রথমে বেঙ্গালুরুতেই ধরা পড়ে করোনা আক্রান্ত রোগী৷ এর পর দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে৷ লকডাউনের জেরে শহরের ১৩,০০০ পরিযায়ী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন৷ ইনকাম ট্যাক্সের অফিসের জয়েন্ট কমিশনার নিশান্ত কে-ই সে রাজ্য প্রথম আইআরএস অফিসার যিনি এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো জন্য এগিয়ে আসেন৷ দফতরের আরও ২০ জন আইআরএস অফিসারকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মযজ্ঞ৷ বোম্মাসান্দ্রার কাছে আটকে পড়া ১,৮০০ পরিযায়ী শ্রমিককে খাওয়ানোর দায়িত্ব নেন তাঁরা৷ প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার মানুষের মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন এই আইআরএস অফিসারের দল৷