নয়াদিল্লি: যে সব ঘরে পেট ভারানোর খাবারটুকু জোটে না, সেই ঘরের ছেলেমেয়েরা টাকা খরচ করে মোবাইল রিচার্জ করে অনলাইনে পড়াশোনা করবে, এটা নেহাত রসিকতা নয় কি? করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে চলা লকডাউনে এখন অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে অনলাইন এডুকেশন৷ কিন্তু গ্রাম বা শহরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ এবং পরযায়ী শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের কি হবে? তাঁরা কি পারবেন ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যয়ভার বহন করতে? কিংবা অন্যান্য অফলাইন বিকল্পগুলির মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে৷ প্রশ্ন তুলেছেন অরুণ রায়ের মতো অসংখ্যা সমাজকর্মী৷ ওই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন তাঁরা৷
সাক্ষরকারীদের তরফে এই চিঠিটি পাঠিয়েছে রাইট টু এডুকেশন (আরটিই) ফোরাম৷ ওই চিঠিতে শিশুদের শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত করার দাবি জানানো হয়েছে৷ বিশেষ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পরা পরিবারের সন্তানদের অধিকারের প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা৷
অরুণ রায়ের সুরে সুর মিলিয়েই আরিটিআই ফোরামের জাতীয় আহ্বায়ক অম্বরিশ রাই বলেন, অনলাইন এডুকেশন সিস্টেমে অধিকাংশ ছেলেমেয়েই শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে চলে যাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দরিদ্র, দলিত, পিছিয়ে পড়া সমাজ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুরা শিক্ষার অধিকার থেকে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হবে৷ NSSO-র ২০১৭-১৮ এর ডাটা অনুযায়ী ভারতে মাত্র ১০.৭ শতাংশ মানুষের হাতে ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার আছে৷ মাত্র ২৩.৪ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ গ্রামাঞ্চলে এই ছবিটা আরও করুণ৷ মাত্র ৪ শতাংশ মানুষের হাতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট পরিষেবা আছে৷’’
রাই মনে করেন, অনলাইনের সঙ্গে অফলাইন শিক্ষা পদ্ধতির মেলবন্ধন ঘটানো উচিত৷ তবে গ্রামাঞ্চলের গরিব পরিবারের সন্তানরা তখনই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে, যখন তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাবে৷ লকডাউনের ধাক্কায় যা চূড়ান্ত ভাবে ব্যহত হয়েছে৷ অপর এক সমাজকর্মী নিখিল দে আবার মনে করেন, আগের মতোই মিড ডে মিল এবং পড়াশোনার উপকরণ দেওয়া উচিত সরকারের৷ যে দেশে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে, সেখানে মিড ডে মিলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ তাদের কাছে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছে দিতে হবে৷ একইসঙ্গে পৌঁছতে হবে পড়াশোনার উপকরণ৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্তানদের ক্লাসরুমে ফেরানোটাই সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷
রায় মনে করেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা শুধু ঘরেই ফেরেনি, ফিরেছে অভাব অনটন৷ যার প্রভাব পড়বে শিশুদের উপরেও৷ স্কুল ছুটের দলে নাম লেখাবে হাজার হাজার খুদে৷ তাদের ঠেলে দেওয়া হবে উপার্জনের পথে৷ স্কুলের ব্যাগ ছেড়ে তারা হয়ে উঠবে শিশু শ্রমিক৷ এমনকী শিশু পাচারের পরিমাণও বাড়বে বলে তাঁর আশঙ্কা৷
শিক্ষা সংক্রান্ত খবর পেতে নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…