নয়াদিল্লি: তদানীন্তন বাংলা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বৃহত্তম একটি প্রদেশ৷ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সঙ্গে ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায় বাংলাও৷ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় পশ্চিমবঙ্গ আর পাকিস্তানের অংশ হয় পূর্ব বাংলা৷ দেশ ভাগের এই ইতিহাস আমাদের আজানা নয়৷ কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না তৃতীয় দেশ হিসাবে স্বাধীন থাকার সুযোগ ছিল বাংলার সামনে৷
আরও পড়ুন- ‘LOC থেকে LAC, শত্রুদের তাদের ভাষাতেই জবাব দিয়েছে ভারত’, কড়া বার্তা নমোর
তার আগে বলে রাখা ভালো ১৯৪৭ সালে কিন্তু প্রথম বাংলা ভাগ হয়নি৷ ১৯০৫ সালে ভাইসরয় লর্ড কার্জন প্রথম বাংলা ভাগ করেন৷ ওই বছর ১৬ অক্টোবর প্রথম বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়৷ সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দু-মুসলিম বিভেদনীতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাকে ভেঙে ফেলা হয়৷ মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাকে হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিমবাংলা থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়৷ কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন৷ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এই আন্দোলনে সামিল হয় আপামর বাঙালি৷
প্রতিবাদে বিদেশি পণ্য বয়কট করা হয়৷ মাস্টারদা সূর্য সেনা, বিপিন চন্দ্র পান, অরবিন্দ ঘোষ এবং সুরেন্দ্র নাথ বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘স্বদেশি’ আন্দোলন৷ যে আন্দোলনের আঁচ সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে৷ আন্দোলনের নেতৃত্বে এগিয়ে আসেন বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায় এবং চিদাম্বরম পিল্লাইয়ের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা৷ ব্যাপক গণআন্দোলনের জেরে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে ব্রিটিশ সরকার৷ বাংলাকে ফের অখণ্ডিত ঘোষণা করেন লর্ড হার্ডিঞ্জ৷ বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলকে একটি প্রদেশে রেখে অসম, বিহার ও ওডিশাকে পৃথক করা হয়৷
আরও পড়ুন- মোদীর ৭ ভাষণে ৩ রেকর্ড! লাল কেল্লা থেকে নয়া রেকর্ড নমোর
ইতিমধ্যে মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় গঠিত হয় অল-ইন্ডিয়া মুসমিল লিগ৷ ১৯১৩ সালে মুসলিম লিগে যোগ দেন মহম্মদ আলি জিন্না৷ কিছু দিনের মধ্যেই তিনি মুসলিম লিগের মাথা হয়ে ওঠেন৷ ১৯১৬ সালে মুসলিম লিগ এবং কংগ্রেস হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনী অঞ্চল গঠনের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছয়৷
১৯৩০ সালে মহম্মদ ইকবাল প্রথম মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেন৷ বলা হয় পাকিস্তানে থাকবে পঞ্চাব, সিন্ধ, বালুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম ফ্রন্টায়ার প্রদেশ৷ এখান থেকেই জন্ম হয় মুসলিম লিগের দ্বি-জাতি তত্ত্ব৷ ১৯৩৩ সালে কেমব্রিজের আইনের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলি পৃথক রাষ্ট্রের নাম দেন পাকিস্তান৷ মজার বিষয় হন, সেই সময় পাকিস্তান থেকে বাদ রাখা হয় বাংলাকে৷
আরও পড়ুন- গালওয়ানে শহিদ কর্নেল স্ত্রীকে শেষবার বলেছিলেন, ‘সাহসী হও’
১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷ কলকাতা, চট্টোগ্রাম, নোয়াখালিতে প্রচুন মানুষের মৃত্যু হয়৷ ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে ইউনাইটেড প্রদেশ (বর্তমানে উত্তর প্রদেশ), বিহার, পঞ্জাবেও৷ ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক হানাহানির মধ্যেই মুসলিম লিগের নেতা হুসেইন শাহীদ সোহরাওয়ার্দী স্বাধীন বাংলা গঠনের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন৷ যা কিনা পাকিস্তান বা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে না৷ এমনকী বাংলাকে ভাগও করা হবে না৷
কিন্তু সোহারাওয়ার্দীর এই চিন্তাভাবনার বিরোধিতা করে মুসলিম লিগ৷ সোহরাওয়ার্দীকে সমর্থন জানান বঙ্গ নেতা শরৎ চন্দ্র বোস এবং কিরণ শঙ্কর রায়৷ কিন্ত এই পরিকল্পনা খারিজ করে দেন জওহরলাল নেহরু, সর্দার প্যাটেল এবং শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়৷
আরও পড়ুন- প্রতিটি গ্রামে মিলবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, হাজার দিনের লক্ষ্যমাত্রা মোদির
১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দী এবং শরৎচন্দ্র বোস অখণ্ড বাংলার ঘোষণা করেন৷ এটাই ছিল ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ঠেকানোর শেষ চেষ্টা৷ ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বেঙ্গল লেজিসলেটর অ্যাসেম্বলিতে বাংলার জন্য তিনটি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপিত হয়৷ প্রথমত- ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, দ্বিতীয়ত পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলানো এবং তৃতীয়ত হল স্বাধীন বাংলা৷ তিনটি ভোটিং পর্বেও এই সমস্যার সমাধানসূত্র মেলেনি৷ ইতিমধ্যে স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব খারিজ করে দেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন৷ শেষ পর্যন্ত দেশ ভাগের সঙ্গে দ্বিবিভক্ত হয়ে যায় বাংলাও৷