পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কী ভাবে তোলা হবে লকডাউন? কঠিন প্রশ্নের মুখে ভারত

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কী ভাবে তোলা হবে লকডাউন? কঠিন প্রশ্নের মুখে ভারত

নয়াদিল্লি: এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে৷ লকডাউনের খাঁচায় বন্দি রয়েছে দেশ৷ কিন্তু লকডাউনের শুরুতেই যে ছবিটা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়ে গিয়েছিল, সেটা হল প্রতিকূল স্রোতে গা ভাসিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার এক অসম লড়াই৷ আর যাঁরা কাজ হারিয়ে আটকে পড়েন ভিন রাজ্যের ত্রাণ শিবিরে, তাঁদের জন্য শুরু হয় বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রাম৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর খাবারের অপ্রতুলতার সঙ্গে মানিয়ে চলার যুদ্ধ৷ 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন ঘোষণা করার পরদিন থেকেই শ্রমিকদের ঘরে ফেরার মিছিল শুরু হয়েছিল৷ ব্যাগ কাঁধে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাসে পৌঁছতে শুরু করেন পরিযায়ী শ্রমিকের দল। বাস টার্মিনাসে দেখা যায় হাজার হাজার লোকের জনসমুদ্র। ১৪ এপ্রিল প্রথম দফার লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ ওই দিন আরও একবার পরিযায়ী শ্রমিকদের জমায়েতের চিত্র দেখল ভারত। দিল্লির স্মৃতি উসকে ওই দিন মুম্বইয়ের বান্দ্রা বাস স্ট্যান্ডে ঢল নামে হাজার হাজার শ্রমিকের৷ 

ভারত এখন এক কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন৷ নির্ধারিত ঘোষণা মেনে আগামী ৩ মে কি প্রত্যাহার করা হবে লকডাউন? আর যদি লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে কি আরও একবার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য তৈরি রয়েছে ভারত? ঘরে ফেরার তাগিদে কি যাবতীয় নিরাপত্তার গন্ডি টপকে শহরের পথ উপচে পড়বে না ভিন রাজ্যে আটকে পড়া প্রায় ৬ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড়?  আরও একটি বিষয় রয়েছে৷ তা হল, অসংগঠিত ক্ষেত্রের এই শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ক্ষুধার জ্বালা মিটিয়ে কী ভাবে কাজে ফেরানো হবে তাঁদের৷ 

২৫ মার্চ লকডাউন শুরু হতেই রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়েন হাজার হাজার শ্রমিক৷ তাঁদের কাছে না আছে টাকা পয়সা না আছে মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস-ট্রেন সহ যাবতীয় পরিহবণ ব্যবস্থা৷ এই অবস্থায় ঘরে ফিরতে মরিয়া শ্রমিকরা শুরু করেন পথ চলা৷ 

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা রাজস্থানের ‘আজিভিকা বুরেয়ু’ নামে এক এনজিও’র প্রধান আনহাদ ইমান বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কোনও সময় দেওয়া হয়নি তাঁদের৷ এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই শ্রমিকদের কথা এবার ভাবা উচিত ছিল৷’’ তিনি আরও জানান, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যের আর্জি জানিয়ে কয়েক হাজার ফোন আসে আমাদের কাছে৷ এই সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে না ছিল কোনও খাবার, না টাকা-পয়সা৷ কারখানার মালিকরাও তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি৷’’

লকডাউনে শুধু ভারতে নয়, সমস্যায় পড়েছেন সারা বিশ্বের পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েক লক্ষ শ্রমিক৷ ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি৷ তবে ভারতের পরিস্থিতি বোধহয় সবচেয়ে জটিল৷ এই অবস্থায় কী ভাবে লকডাউন তোলা হবে, তা ভারতের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =