করোনা রুখতে ১ মিটার দূরত্ব যথেষ্ট নয়, কতটা দূরত্ব রাখতে হবে? বলছে নয়া গবেষণা

করোনা রুখতে ১ মিটার দূরত্ব যথেষ্ট নয়, কতটা দূরত্ব রাখতে হবে? বলছে নয়া গবেষণা

নয়াদিল্লি:  স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বার বার বলছেন নোভেল করোনা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় মানুষের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা। তবে এতদিন এই দূরত্বের যে লক্ষ্মণরেখা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়, এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল নতুন এক গবেষণায়।

আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে পিটিআই-এর করা প্রতিবেদন সূত্রে খবর, এতদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লুএইচও) এবং ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে এতদিন ১মিটার (৩ ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে তা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। এই গবেষণা বলছে যে, হাঁচি-কাশি থেকে নির্গত গ্যাস ক্লাউডের (জলীয়কনা যুক্ত একসঙ্গে একগুচ্ছ বায়ুকনা নিয়ে তৈরি হওয়া বাষ্পের মত জিনিসটি)  মাধ্যমে ভাইরাস কণাগুলি ৮ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ডাব্লুএইচও এবং সিডিসির জারি করা বর্তমান নির্দেশিকা ১৯৩০-এর দশকের পুরানো মডেলের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ কীভাবে সাধারণ কাশি, হাঁচি বা শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত জলীয় বায়ুকনার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, পুরোনো সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বর্তমানের এই নির্দেশিকা।

এই গবেষণামূলক প্রতিবেদনটির লেখক, এমআইটির সহযোগী অধ্যাপক লিডিয়া বারোউইবা সতর্ক করেছিলেন যে, সমস্ত আকারের কনাগুলি যা প্যাথোজেন বহন করে সেগুলি ২৩ থেকে ২৭ ফুট বা ৭-৮ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে ।বারোউইবার মতে, বর্তমান নির্দেশিকার ভিত্তিতে “খামখেয়ালি” ধরণের এই কনা সম্পর্কে অনুমান, “অত্যধিক সরলীকৃত” যা মারাত্মক মহামারীটির বিরুদ্ধে “প্রস্তাবিত নিয়মবিধির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে৷”

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, অতীতের ধারণা অনুসারে  কোনও ব্যক্তির নিঃশ্বাস, বা হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা ছোট-বড় মাপের জলীয়কনাগুলি স্বল্প-পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে । সেই ধারণার ভিত্তিতেই বর্তমানে এই ধরণের বায়ুকনাগুলিকে ছোট বা বড় দুটি বিভাগের মধ্যে একটি হিসাবে ধরে নিয়ে বর্তমান নোভেল করোনা নিয়ন্ত্রণের দুরত্ব নিয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। তবে সাম্প্রতিকতম নতুন আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে এই এমআইটি বিজ্ঞানী বলেছেন, হাঁচি এবং কাশি মাধ্যমে  ছোট-বড় নানা আকারের যে এক গুচ্ছ জলীয় কনা একসঙ্গে বেড়িয়ে আসে সেগুলি পাফ ক্লাউড অর্থাৎ এতটাই হালকা যে খুব সহজেই পারিপার্শ্বিক হাওয়ার মাধ্যমে বিস্তৃতভাবে অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তাঁর মধ্যে যে ছোট কনাগুলি শ্বাসযন্ত্রের উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থা থেকে বাইরের ঠান্ডা ও শুষ্ক পরিবেশে বেরিয়ে আসে সেই জলীয় কনা গুলিতে বাষ্পীভবন ঘটে ফলে জল উড়ে গিয়ৈ কনাগুলি শুকনো উপাদানের মতো অবশিষ্টাংশে পরিনত হয়। প্যাথোজেন বহনকারী জলীয় কনাগুলি (ড্রপলেট) বিচ্ছিন্নভাবে যতদূর না যেতে পারে তুলনায় একসঙ্গে জোটবদ্ধ বাষ্পের আকারে  নির্গত ড্রপলেটের গুচ্ছ এক ধাক্কায় সেই তুলনায় অনেক বেশি দূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায়, একটি কনার আয়ু হতে পারে এক সেকেন্ড থেকে  মিনিটের এক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়।

কোভিড-১৯ কে রুখতে ড্রপলেটের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের উপর আলোকপাত করেই এপর্যন্ত নানান বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হলেও। নতুন এই গবেষণা বলছে যে, এইমূহুর্তে এর থেকেও বেশি প্রয়োজন এটাই যে, এই ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের ওপর ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলছে। কারন এই ভাইরাসের মূল লক্ষ্যই হলো ফুসফুসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করা। এই সমাধান খুঁজে পেলেই ধারণা করা সম্ভব হবে যে প্রকৃতপক্ষে এই রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *