সুনন্দা বারুই: ‘য সহে সে রহে’- কিন্তু এই সহ্যের সঠিক সংজ্ঞা কি? সহ্যের সীমা কেন, কখন, কোথায়, কিভাবে, রাখতে হবে বা ছাড়িয়ে যেতে হবে তার সুলুক সন্ধান এযাবৎ কোনো মহাপুরুষ বা দার্শনিক দিয়ে যেতে পেরেছেন বলে জানা নেই৷ তবে এবিষয়ে জানতে গেলে বিস্তর জ্ঞানলাভ ও দর্শনবোধ হবে তা অনস্বীকার্য৷ আজ সকাল থেকেই সহ্যের শুরু থেকে শেষ সব বিত্তান্তই বিশ্বের সব দেশের আলোচ্য বিষয় ছিল৷ কারণ আজ ছিল ‘বিশ্ব সহনশীলতা’ দিবস৷
বিংশ শতাব্দীর ৯০ দশকের প্রথম দিকে স্নায়ু যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে,বিশ্বব্যাপী অসহিষ্ণু বাতাবরণে মানুষের সহনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে সংস্কৃতি ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা তৈরির বিষয়ে বদ্ধপরিকর হয় জাতি সংঘ৷ ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত সহনশীলতা নীতি৷ ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ইউনেস্কোর ২৮তম অধিবেশনে ‘সহনশীলতার মৌলিক নীতি ঘোষিত এবং গৃহীত হয়৷ প্রতি বছরের ১৬ নভেম্বর দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস’ (International Day of Tolerance) হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
এবছর এই দিনটি উপলক্ষে ইউনেস্কো প্রধান অড্রে আজোলে বলেন”সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পদের এক রূপ, বিভাজনের কারণ নয়৷” তিনি আরও বলেছেন, এটা এমন একটা সময় যখন চরমপন্থা ও ধর্মান্ধতা প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে, ঘৃণার বিষ মানবতার একটি অংশকে বিষাক্ত করে চলেছে, তাই এই সময়টাই সহনশীলতার জন্য সবথেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ৷
আসলে সহশীলতা আমাদের দুর্বলতা নয়৷ সহনশীলতা শিক্ষার পরিচয়, সামাজিক মূল্যবোধের প্রকাশ৷ তাই বহুত্ববাদী সংস্কৃতির মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের সুষম ও শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান নিশ্চিত করাই এই দিনটির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত৷
সহনশীলতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এত তাত্ত্বিক, গভীর, জটিল বিষয়গুলো কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রেখে একটু সহজভাবে দেখলে আমাদের প্রতিদিনের জীবনেও কিন্তু সহশীলতার অভাব বেড়েই চলেছে৷ অসহিষ্ণুতা এখন অভিভাবক-সন্তান, গুরু-শিষ্য, কর্তৃপক্ষ-কর্মী এসব সম্পর্কের মধ্যেও নিত্যসঙ্গী৷
সর্বোপরি বর্তমান আধুনিকতার চাপে প্রকৃতিও এখন অসহিষ্ণু৷ এসবের সহাবস্থানে মানবজাতির অস্তিত্বও বিপন্ন৷ সহনশীলতাকে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করে একটু একটু করে আবার একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে৷ এই হোক আজকের সংকল্প৷