দেরাদুন: উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি শিহরিত করেছে গোটা দেশকে। গতকাল হিমবাহ চ্যুতির ফলে যে বিপুল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয় উত্তরাখণ্ডের একাধিক নদীতে, তার জেরে প্রায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে নদী তীরবর্তী লোকালয়। দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ধ্বংস হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে আতঙ্কিত সকলেই। কিন্তু কেন ভাঙল হিমালয়ের হিমবাহ? কীভাবেই বা তৈরি করল এই বিপুল জলোচ্ছ্বাস? আসুন চোখ রাখা যাক কিছু ভৌগোলিক তত্ত্বে।
কীভাবে হিমবাহ এবং হিমবাহের লেক তৈরি হয়?
বস্তুত, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া পৃথিবীর মোটামুটি সবকটি মহাদেশেই রয়েছে হিমবাহ। পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল হিমবাহের কিছু কিছু শত শত বছরের পুরোনো। হিমালয়তেও আছে একটা বড় অংশের হিমবাহ যা ভারতের উত্তর সীমা বরাবর প্রশস্ত। রবিবারের দুর্যোগ আসে দক্ষিণ হিমালয়ের তেমনি এক হিমবাহ থেকে।
জমাটবদ্ধ বরফ স্তরীভূত হয়ে তৈরি হয় হিমবাহ। এগুলি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে অত্যন্ত ধীর গতিতে বয়ে চলে। হিমবাহের “জিভ” (সূচনা) কখনো কখনো বিস্তার লাভ করতে পারে হাজার হাজার মাইল। ন্যাশানাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, “বরফ পাহাড়ের উপত্যকা দিয়ে, সমভূমি দিয়ে এমনকি সমুদ্রের উপর দিয়েও বয়ে যেতে পারে।” স্তুপীকৃত বরফ বা হিমবাহ জমে জমেই তৈরি হয় হিমবাহের লেক।
হিমবাহ ভেঙে বা ফেটে যায় কেন?
রবিবার নন্দাদেবী নদীর হিমবাহ কেন চ্যুত হয়েছে, তার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায় নি। তবে সাধারণত ভূমিকম্পজাত আলোড়নের ফলে কিংবা ক্রমবর্ধমান জলের চাপের ফলে হিমবাহ ভেঙে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে মূল উদ্বেগের বিষয়টি হল প্রকৃতির আচরণের পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ তাপমাত্রা এবং তুষারপাত হ্রাসের কারণে বরফ গলতে শুরু করেছে হিমালয়ের। এর ফলেই বিপদসীমা ছাড়িয়েছে জলস্তর। এ প্রসঙ্গে উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী সারা দাস জানিয়েছেন, “পৃথিবীর বেশিরভাগ বড় বড় হিমবাহই গত কয়েক বছরে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অবিশ্বাস্য ভাবে গলতে শুরু করেছে।”
এ ধরণের বিপর্যয় কি আগে থেকে আন্দাজ করা সম্ভব?
অতীতে ভয়াবহ ও মারাত্মক হিমবাহ বিস্ফোরণের সাক্ষী থেকেছে নেপাল এবং পেরু। কিন্তু হিমবাহের অবস্থান সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল থাকার মানেই হল কখন বা কতদিন অন্তর তা ফাটতে চলেছে তা বোঝা যাবে না। সারা দাস জানিয়েছেন, “গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের হার যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, তাতে বলা যায় এই ধরণের দুর্যোগ এবার থেকে আরো বেশি করে হবে এবং ব্যবধানও কমবে।”