মুম্বই: সারা বিশ্বে করোনা রোগিদের সেবায় দিন-রাত এক করে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। ঠিকমতো ঘুম নেই, খাওয়া নেই, সর্বত্র রোগির পরিষেবার ব্যস্ত তারা। নিজেদের পরিবারে সঙ্গে ও দূরত্ব রেখেই চলেছেন। মুখে সারাক্ষণ মাস পরে থাকতে থাকতে চোখের তলায় দাগ পড়ে গেছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগিকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে নিরলস প্ররিশ্রম করে চলেছেন তারা। কিন্তু এবার মারণ রোগে আক্রান্ত হলেন মুম্বাইয়ের ওকহার্ড হাসপাতালের ২৬ জন নার্স ও তিন চিকিৎসক। তাদের দেহে করোনা ভাইরাসের জীবাণু মিলেছে।
আক্রান্ত রোগীদের থেকেই এই জীবাণু তাদের শরীরে ঢুকেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরপরেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের দরজা। বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ কিংবা ভেতরে যারা ছিলেন তাদের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওকহার্ড হাসপাতাল ও লাগোয়া চত্বরকে সংক্রমিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছে ব্রিহানমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (বিএমসি)। মুম্বাইয়ের ওকহার্ড হাসপাতাল করোনার চিকিৎসা প্রদানের জন্য ভারত সরকারের তালিকায় থাকা হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৭০ বছর বয়সী এক কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর দেখাশোনায় নিয়োজিত দু’জন নার্সের মধ্যে প্রথমে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাদের কাছ থেকে সংক্রমিত হন অপর ২৭ জন নার্স ও চিকিৎসক। আক্রান্ত নার্সদের কোয়ার্টার থেকে হাসপাতালে নিয়ে এসে আলাদা কেবিনে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে একজনের চিকিৎসা চলছে সেভেনহিলসে, অন্যজনের এসএল রাহেজা হাসপাতালে। আরও ২৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর লালারসের নমুনা পাঠানো হয়েছে ল্যাব-টেস্টের জন্য।
আপাতত ওকহার্ড হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনও রোগী, ডাক্তার-নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসপাতালের বাকি রোগী ও কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, হাসপাতালের দরজা বন্ধ রাখা হবে। অপরদিকে আক্রান্ত নার্স করোনা আক্রান্ত নার্সের অভিযোগ, রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থাই তাদের জন্য রাখা হয়নি। সংক্রমণ ঠেকানোর মতো পোশাক, পিপিই কিছুই ছিল না।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওপিডি ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ভেতর ও বাইরের এলাকা স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। তবে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবারের কোনও অভাব নেই। তবে তাঁরা যাতে হাসপাতালের বাইরে যেতে না পারেন, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।