চোখ রাঙাচ্ছে নিজামুদ্দিন, চরম আশঙ্কা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের

চোখ রাঙাচ্ছে নিজামুদ্দিন, চরম আশঙ্কা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের

3 stocks recomended

নয়াদিল্লি: করোনা রুখতে লকডাউন গোটা দেশ৷ কিন্তু উদ্বেগ এখনও অব্যাহত৷ ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ বৃহস্পতিবার দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক৷
এদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল জানান, বুধবার থেকে এখনও পর্যন্ত সারা দেশে নতুন করে ৩২৮ জন আক্রান্তের খবর মিলেছে৷ ২৯টি রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১,৯৬৫৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের৷ তবে ইতিবাচক বিষয়টি হল, এই সংকটের মধ্যেই করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫১ জন৷

তিনি জানান, বুধবার ক্যাবিনেট সেক্রেটারি প্রতিটি রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং ডিজিপি-দের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে করেন৷ ওই বৈঠকে তবলিঘি জামাতের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রতিটি সদস্য ও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার উপর জোড় দেওয়া হয়েছে৷ এই বিষয়টি প্রথম নজরে আনে তেলেঙ্গানা৷ সে রাজ্য নিজামুদ্দিনের সমাবেশে যোগ দেওয়া ছয় জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ বাড়তে থাকে৷ এই জমায়েতে অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষ আন্দামান নিকোবর, দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, পুদুচেরী, রাজস্থান, অসম ও উত্তরপ্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে৷ তিনি বলেন, এই সকল রাজ্য থেকে করোনা আক্রান্তের খবর আসার পরই টেস্টিং প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে৷ এই রাজ্যগুলি থেকে ইতিমধ্যেই ৪০০ জন আক্রান্তের খবর মিলেছে৷ আক্রান্তরা সকলেই ওই সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন৷ রিপোর্ট আসার পর আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে৷  

আগরওয়াল জানান, শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে ১৭৩, রাজস্থানে ১১, আন্দামান নিকোবরে ৯, দিল্লিতে ৪৭, পুদুচেরীতে ২, জম্মু কাশ্মীরে ২২, তেলেঙ্গানায় ৩৩, অন্ধ্রপ্রদেশে ৬৭ এবং অসমে ১৬ জনের পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে৷ নমুনা সংগ্রহের রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত সংখ্যাটাও বেড়ে চলেছে৷

করোনা নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া গুজব নিয়েও এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন আগরওয়াল৷ তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভুয়ো খবর নিয়ে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র সচিব রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছি৷  সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশানুসারে মানুষের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে এইমসের চিকিৎসক ও যুগ্ম সচিব মিলিতভাবে একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে৷ খোলা হয়েছে ইমেল আইডি৷ যেখানে টেকনিক্যাল বিষয়ে মানুষ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন৷ ইতিমধ্যে ৯০০ জন ওই ইমেল অ্যাড্রেসে মেল পাঠিয়েছেন বলেও জানান তিনি৷ এই মেলগুলি বিশ্লেষণ করে যথাযথ উত্তরও দেওয়া হচ্ছে৷

এদিন প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারন্সের মাধ্যমে কথা বলেন৷ করোনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে রাজ্যগুলিকে বেশকিছু পরামর্শও দেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই মুহূর্তে টেস্টিং, আইসোলেশন এবং কোয়ারান্টিনের উপর বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ যাঁরা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাঁদের অনলাইন ট্রেনিংয়ের কথাও বলেন নমো৷

এছাড়াও তাঁর পরামর্শ, সরকারি ও বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী, এনজিও, এনসিসি ও এনএসএস-এর ভলেন্টিয়ার সকলকে নিয়ে একটি ফোর্স গঠন করতে হবে৷ লকডাউনকে সফল করতে হবে৷ সামাজিক দূরত্ব ঠিক মতো মানা হচ্ছে কিনা, তার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে রাজ্যগুলিকে৷ রাজ্যগুলি জানিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক ও বিদেশিদের নিয়মিত ফলোয়াপে রাখা হচ্ছে৷ তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে৷

প্রতিটি রাজ্যে করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র, আইসিইউ বেড, কোয়ারেন্টাইন, ভেন্টিলেটর এবং পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্টের উপরও বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দূরে বসে কথা বললেও সাম্যই আমাদের শক্তি৷ এই মহামারির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে৷ দেশের প্রতিটি নাগরিক, প্রতিটি সরকারি কর্মী সতর্ক হয়ে সেই লড়াই লড়ছেন৷ মানবজাতির ইতিহাসে বিশ্বজুড়ে এমন সংকট এর আগে দেখা যায়নি৷ সব ভেদাভেদ ভুলে এই সংকটের মোকাবিলায় এক হতে হবে৷

পাশাপাশি এদিন আগরওয়াল বলেন, সামনের সাড়িতে দাঁড়িয়ে যাঁরা লড়াই করছেন, সেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর কোনও রকম অত্যাচার সহ্য করা হবে না৷ প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =