লখনউ: গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের জীবন রুপোলি পর্দার কোনও চিত্রনাট্যের চেয়ে কম ছিল না৷ ১৯৯০ সাল থেকে একের পর এক অপরাধে জড়িয়েছে তার নাম৷ খুন, ডাকাতি, অপহরণ, মারদাঙ্গার মতো একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, রাজনীতির ছত্রছায়ায় বারবার পুলিশের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে সে৷ এহেন এক কুখ্যাত গ্যাস্টারের জীবনেও এসেছিল প্রেম৷ ২০ বছর আগে চূড়ান্ত নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে মধ্যপ্রদেশের শাহদল জেলার রিচা নিগম ওরফে সোনুর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে বিকাশ৷ টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তার নতুন জীবন৷
এই বিয়ের পক্ষে মত ছিল না রিচার বাবা ও তার পরিবারের সদস্যদের৷ কিন্তু রিচার বাবাকে গান পয়েন্টে রেখে তাকে রিয়ে করে বিকাশ৷ বিয়ের পর বিকাশের অপরাধ দুনিয়ার পার্টনার হয়ে যায় রিচাও৷ সম্প্রতি বিকাশের কাজকর্মের ভার অনেকটাই সামলাচ্ছিল সে৷ বিকাশ ও তার শাগরেদদের গুলিতে আট পুলিশকর্মীর মৃত্যুর পর গা ঢাকা দেয় রিচা৷ কিন্তু গতকাল বিকাশকে গ্রেফতার করার পরই পুলিশের জালে ধরা পড়ে রিচা ও তাদের ছেলে৷ লখনউয়ের কৃষ্ণনগরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে এসটিএফ৷
এদিকে সূত্র ধরে পুলিশ এসে পৌঁছয় জ্ঞানেন্দ্রর কাছে৷ পুলিশি জেরার মুখে সে জানায়, ২৫ বছর আগে বিকাশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তার৷ কিন্তু বিকাশ পর পর দুটি ফৌজদারি মামলায় জড়ানোর পরই কানপুর থেকে চলে যায় সে৷ ২০ বছর আগে তার বোন রিচার সঙ্গে বিয়ে হয় বিকাশের৷ এর পর থেকে তাদের মধ্যে আর কোনও যোগাযোগ ছিল না৷ ১০-১৫ বছর তাদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি৷ জ্ঞানেন্দ্রর অভিযোগ, বিকাশ জোড় জবড়দস্তি তার কানপুরের বাড়ি দখল করে রেখেছিল৷ প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে সেই বাড়ি উদ্ধার করেছে জ্ঞানেন্দ্র৷
জানা যায়, কানপুরের শাস্ত্রী নগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে এসেছিল বিকাশ দুবে৷ সেখানেই রিচার সঙ্গে দেখা হয় তার৷ একই পাড়ায় থাকত তারা৷ রিচার বাড়ির নাম ছিল সোনু৷ রিচার বাবা এইচপি নিগম ছিলেন এয়ারফোর্স কর্মী৷ রিচার সান্নিধ্য পেতে তার ভাই জ্ঞানেন্দ্রর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায় বিকাশ৷ তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে, বিকাশের প্রতিটি কাজকে সমর্থন করতে শুরু করে জ্ঞানেন্দ্র৷ জ্ঞানেন্দ্রর সূত্রেই রিচার বাড়িতে শুরু হয় বিকাশের যাতায়াত৷ যে কোনও ছুঁতোয় যে কোনও সময় রিচার বাড়ি পৌঁছে যেত সে৷ ধীরে ধীরে বিকাশ এবং রিচা কাছাকাছি আসতে শুরু করে৷ তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ এরই মধ্যে রিচার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখে বিকাশ৷ কিন্তু ভিন্ন জাতের হওয়ায় বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তাঁরা৷
এর পরই বাড়িতে কড়াকড়া শুরু করে দেন রিচার বাবা৷ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিকাশ যেন কোনও ভাবেই তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে না পারে৷ কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তে চটে যায় বিকাশ৷ রিচার বাবাকে বন্দুক দেখিয়ে রিচাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সে৷ তবে বিয়ের কিছুদিন পরেই বাড়ি ফিরে আসে রিচা৷ কিন্তু রিচাকে ক্রমাগত হুমকি দিতে শুরু করে বিকাশ৷ এর পর ফের একসঙ্গে থাকতে শুরু করে তারা৷ বিকাশের ডান হাত হয়ে ওঠে রিচার ভাই৷