নয়াদিল্লি: করোনা আতঙ্কে গোটা দেশ ঘরবন্দি৷ কিন্তু আজও ঘরে ফিরতে পারেননি হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক৷ তাঁরা আটকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ আশা ছিল, ১৫ তারিখ এলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কিন্তু করোনার দাপটে আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে লকডাউন৷ লকডাউনে একটাই প্রাপ্তি, দূষণমুক্ত হয়েছে প্রকৃতি৷ কলুষতা হারিয়ে স্বচ্ছ নীল হয়েছে যমুনার জল৷ কিন্তু যমুনার তীরে আটকে পড়া মানুষগুলো পরিণত হয়েছে জীবন্ত লাশে৷ না আছে খাবার, না আছে মাথার উপর ছাদ৷ করোনা রুখতে ‘সামাজিক দূরত্বে’র বিধান এখানে নিষ্ঠুর পরিহাস মাত্র!
যমুনার দুই পাড়ে উপচে পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড়৷ অত্যন্ত অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন কয়েকশ মানুষ৷ একটা গামছা বা তোয়ালে ছাড়া তাঁদের কাছে প্রায় আর কিছুই নেই৷ কেউ কেউ আবার পোটলাটাকেই বালিশ করে মাটিতে শুয়ে পড়েছেন৷ কেউ কেউ আবার দিন কাটাচ্ছেন এক কাপড়ে৷ ময়লা আবর্জনা ঘেরা যমুনার পাড়ই তাঁদের বর্তমান ঠিকানা৷ অথচ এখান থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে টিলিভিশনের পর্দায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ জানিয়েছিলেন কেন বাড়ানো হল লকডাউনের মেয়াদ!
বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে পুরনো দিল্লিতে আসে শ্রমিকের দল৷ যা কাজ জোটে তাই তাঁদের বেঁচে থাকার সম্বল৷ নির্মাণকাজ, মাল তোলা, কল সারাই বা কোনও অনুষ্ঠানের মঞ্চ বেঁধে পেট চলে তাঁদের৷ লকডাউনে বন্ধ হয়েছে রোজগারের পথ৷ বাড়ি ফেরারও কোনও উপায় নেই৷ হাতে টাকা পয়সা নেই৷ ২১ তারিখের পর একটা টাকাও রোজগার করতে পারেননি তাঁরা৷ দু’মুঠো খাবারের জন্য তাঁরা সম্পূর্ণভাবে এখন দিল্লি সরকারের উপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু গত তিন দিন ধরে সরকারের তরফে কোনও খাবার পাঠানো হয়নি তাঁদের৷
মাঝবয়সী এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘শনিবারের পর থেকে ঠিকমতো খাবার জোটেনি৷ দুই রাত জল খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি৷’’ আবার বছর ২৩ এর এক যুবক বলেন, লকডাউনের জেরে কোথাও খাবার খুঁজতেও যেতে পারছি না আমরা৷ মন্দির, গুরুদ্বরা, দর্গা সবই তো বন্ধ৷ কি খেয়ে বাঁচব আমরা?
গত শনিবার অর্থাৎ ১১ এপ্রিল ৩টি স্টিল কেবিন তৈরি করা হয়েছিল নাইট শেল্টারের জন্য৷ কিন্তু তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় অসন্তুষ্ট একদল মানুষ৷ এক আধিকারিক জানান, ওই কেবিনগুলিতে মোট ১০৪ জন ছিলেন৷ সেখানে একটি কমিউনিটি কিচেনও চালানো হচ্ছিল৷ যাঁরা আশ্রয়হীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের কাছে এখান থেকেই খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল৷ তিনি আরও জানান, প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৯,০০০ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু খাবার কম থাকার অভিযোগে ওই সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে না খেতে পয়ে মরতে বসেছে খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকা মানুষগুলো৷
এদের অনেকেরই গায়ে ধূম জ্বর, রয়েছে সর্দি-কাশিও। কিন্তু কোথায় করোনা পরীক্ষার বালাই নেই৷ এরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে, না কি একটু খাবার জোগার করবে! বেঁচে থাকাটাই যে বড় দায়৷ অবিলম্বে এই মানুষগুলোর কথা না ভাবলে, অনেক দেরি হয়ে যাবে৷ পরে আজ স্থানীয় পুলিশ ঘটানাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের উদ্ধার করে৷ স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহ কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷