ছেলের মরা মুখটাও দেখা হল না! বুক ফাটা আর্তনাদ শ্রমিক পিতার

ছেলের মরা মুখটাও দেখা হল না! বুক ফাটা আর্তনাদ শ্রমিক পিতার

নয়াদিল্লি: চোখমুখ জুড়ে শুধুই শোকের ছায়া৷ দু’চোখ দিয়ে অবিরাম জল ঝরে পড়ছে৷ দিল্লির নিজামুদ্দিন সেতুর উপরেই এক পাশে ফোনে কথা বলতে বলতে বসে পড়েছিলেন রামপুকার পণ্ডিত৷ কান্নায় গলা ধরে এসেছে তাঁর৷ শোকে বিহ্বল রামপুকারকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন পিটিআই-এর চিত্র সাংবাদিক অতুল যাদব৷ 

তবে শুধু তাঁর ছবি তুলে চলে যেতে পারেননি তিনি৷ পরিযায়ী শ্রমিক রামপুকারের আর্তনাদ আর হাহাকার দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল অতুলের৷ তাঁর এই বিহ্বলতার কারণ জানতে চান তিনি৷ কথা বলে জানতে পারেন, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তাঁর ছেলে৷ যে কোনও অবস্থায় তিনি এখন বাড়ি ফিরে যেতে চান৷ কিন্তু কোথায় তাঁর বাড়ি? কোনও মতে ফোঁপাতে ফোঁপাতে দিল্লির সীমান্তের দিতে হাত উঁচিয়ে তিনি বলেছিলেন ‘উধার’ (ওখানে)৷ অনেক পরে অতুল বুঝতে পারেন আসলে তাঁর বাড়ি এখান থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরে বিহারের বেগুসরাইয়ের বরিয়ারপুরে৷ দিল্লির নাজাফগরে শ্রমিকের কাজ করেন তিনি৷ ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে বেপরোয়া রামপুকার পায়ে হেঁটেই রওনা দেন বাড়ির পথে৷ 

গত দুই মাস ধরে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের অসংখ্যা ছবি ফুটে উঠেছে দেশবাসীর সামনে৷ যা ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছে মানুষের মনকে৷ সম্প্রতি পিটিআই-এর ওই ফটোগ্রাফারের লেন্সে ধরা পড়ে চোখে জল আনা ওই ছবি৷ যা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়৷ এই ছবিটি উঠে এসেছে একধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও৷ রাজধানীর রাজপথের ধারে চিত্র সাংবাদিক অতুল যাদবের তোলা এই ছবি আরও একবার যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এ দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কাহিনী৷ এই সাক্ষাতের স্মৃতি ভুলতে পারেননি অতুলও৷ 

অতুল বলেন, আমি বহু পরিযায়ী শ্রমিকের ছবি তুলেছি৷ কিন্তু রাস্তার ধারে বলে এমন আকুলভাবে কাউকে কাঁদতে দেখিনি৷ তিনি জানান, রামপুকার নিজামুদ্দিন সেতুর উপর ওঠার পরই তাঁর পথ আটকায় পুলিশ৷ হতাশ হয়ে সেতুর ধারেই বসে পড়েন তিনি৷ অতুল তাঁকে বিস্কুট আর জল খেতে দেন৷ আশ্বস্ত করারও চেষ্টা করেন৷ কিন্তু কোনওভাবেই শান্ত করা যায়নি অস্থির পিতাকে৷ ঘরে ফেরার জন্য ছটফট করতে থাকেন রামপুকার৷ এর পর অতুল নিকটবর্তী পুলিশ থানায় গিয়ে কথা বলেন৷ প্রথমে তাঁরা অসম্মত হলেও, একজন সাংবাদিকের অনুরোধ ফেলতে পারেননি৷ রামপুকারকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন৷ 

সব রকম ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরে আসার পর অতুল ভাবেন, ওই পরিযায়ী শ্রমিকের নামটাই তো জানা হল না৷ ফোন নম্বরও নেওয়া হল না৷ তিনি বাড়ি পৌঁছেছেন কিনা, তা জানতে উতলা হয়ে ওঠেন অতুল৷ এর পরই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাঁর ছবি প্রকাশ করেন তিনি৷ ছাপা হয় তাঁর কাহিনী৷ এর পরেই অতুল জানতে পারেন, ওই পরিযায়ী শ্রমিকের নাম রামপুকার৷ জানতে পারেন তিনি বাড়ি পৌঁছতে পারলেও, জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে তাঁর সন্তান৷

সঠিক খবরের জন্য নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − four =