নয়াদিল্লি: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারত৷ আর এই বেহাল পরিস্থিতির জন্য ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে নরেন্দ্র মোদি সরকার৷ ভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শিবির যেমন বারবার প্রধানমন্ত্রী মোদির দিকে ব্যর্থতার আঙুল তুলেছে, তেমনই আন্তর্জাতিক দুনিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও নিশানা করা হয়েছে তাঁকে৷ এই পরিস্থিতিতে করোনা সংকট নিয়ে মোদি সরকারের চরম সমালোচনা করল প্রখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’। আন্তর্জাতিক এই পত্রিকার দাবি, মোদি সরকারই এই সংকট তৈরি করেছে, চাইলে এটা এড়ানো যেত৷ ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মোদি সরকার যে ভাবে কোভিড পরিস্থিতিকে খাটো করে দেখেছে তাতেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া সম্ভব হয়েছে৷
চিকিৎসা সংক্রান্ত পত্রিকাটি তাদের সম্পাদকীয়র প্রথম অনুচ্ছেদেই ভারতের করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মোদি সরকারকে বিঁধে লিখেছে, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকার ধর্মীয় উৎসব ও রাজনৈতিক সভার মতো অতি সংক্রামক বা সুপার স্প্রেডার অনুষ্ঠান করতে দিয়েই বিপদ ডেকে আনা হয়েছে৷ মোদি সরকারের তরফে সমালোচনা ধামাচাপা দেওয়া বা পরামর্শ খোলা মনে মেনে নিতে না-পারাই ভারতের সংকট বাড়িয়েছে বলে মনে করছে ল্যানসেট৷ বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতিতে এই ধরনের মনোভাব ক্ষমার অযোগ্য বলেও কড়া মন্তব্য করেছে তারা৷ পত্রিকাটি মনে করছে, মোদি সরকার করোনা মোকাবিলায় প্রথম দফায় যে সাফল্য পেয়েছিল, তা তছনছ করে দিয়েছে আত্মতুষ্টি দেখিয়ে৷ করোনা মোকাবিলায় প্রথম পর্যায়ে ভারত সরকার যে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিল, এপ্রিল মাসের আগে বেশ কয়েক মাস তারা কোনও বৈঠকই করেনি৷ এমনকী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও যে দাবি করেছিলেন, ভারতে অতিমারির শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে, সেকথারও উল্লেখ করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে৷
এখন এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই ভারতকে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে বলে দাবি করেছে ল্যানসেট৷ সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, দেশের কথা ভেবে মোদি সরকার নিজেদের ভুল শুধরে না-নিলে কিছুই করার নেই৷ ল্যানসেট আরও যে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে, তা হল, ‘দ্য ইন্সটিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’-এর অনুমান অনুযায়ী, ভারতে আগামী ১ অগস্টের মধ্যে করোনায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে। এবং এই মৃত্যুমিছিলের জন্য মোদি সরকারই দায়ী থাকবে বলে অভিযোগ করেছে ল্যানসেট৷