নয়াদিল্লি: মাস খানেক আগের ঘটনা৷ দিল্লির ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় ১৩ বছরের এক কিশোরীর৷ দিদির লিভারের অংশ নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় বোনের শরীরে৷ অত্যাধুনিক চিকিৎসার যুগে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের মতো ঘটনা আকছাড়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টি ততটাও সহজ ছিল না৷ কারণ, নিজের লিভারের অংশ দিয়ে ছোট বোনের প্রাণ বাঁচানো দিদি ছিলেন করোনা জয়ী রোগী৷
হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, গত ২০ মে ওই কিশোরীর লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়৷ সম্ভবত সেই প্রথম ব্যক্তি, যার শরীরে প্রতিস্থাপিত হল কোনও কোভিড আক্রান্ত রোগীর লিভার৷ সার্জারির মাত্র তিন সপ্তাহ আগে করোনাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন লিভার ডোনার৷
জানা গিয়েছে, ক্যারোলি নামে এক বিরল জন্মগত রোগে ভুগছিল ১৩ বছরের ওই কিশোরী৷ এই অসুখে আক্রান্ত হয়েছিল তার পিত্তনালী৷ গত মার্চ মাসেই অপারেশন হওয়ার কথা ছিল তার৷ কিন্তু অপারেশনের দু’দিন আগে রুটিন চেকআপ করতে গিয়ে ডোনারের শরীরে করোনা ধরা পড়ে৷ কিন্তু কোনও উপসর্গ ছিল না তাঁর৷ কিন্তু কোভিড পজেটিভ হওয়ায় অপারেশনের পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়৷
ম্যাক্স সেন্টার ফর লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সের চেয়ারম্যান ডা. সুভাষ গুপ্তা বলেন, ওই কিশোরীর শারীরিক অবস্থা এতটাই সঙ্গীন ছিল যে, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু সম্ভাব্য ডোনারাও এর জন্য উপযুক্ত ছিল না৷ গত ছয় মাস ধরে বারবার জ্বর আর সংক্রমণে ভুগছিল ছোট্ট মেয়েটি৷ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতেও ফল মিলছিল না৷ অসুখে ক্রমাগত ‘অক্ষম’ হয়ে পড়ছিল সে৷ ডা. গুপ্তা বলেন, ‘‘এর পরেই আমরা ঠিক করি ডোনারকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা করা হবে এবং তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব৷ ট্রান্সপ্লান্টের আগে পাঁচ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয় আমাদের৷’’
তিন সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছিল ওই কিশোরীর দিদি৷ কিন্তু অপারেশনের জন্য আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করা হয়৷ কারণ কোভিড সমস্ত অঙ্গকে প্রভাবিত করে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি এখনও নির্ধারিত হয়নি৷ তবে পরবর্তীকালে কোনও জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন ডা. গুপ্তা৷ তিনি বলেন, ডোনার সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরই তাঁর শরীর থেকে লিভারের অংশ নেওয়া হয়েছে৷ এমনকী কোভিড-১৯ টেস্টের পাশাপাশি বুকের সিটি স্ক্যান করেও দেখে নেওয়া হয়েছিল, কোনও টিস্যু নষ্ট হয়েছে কিনা৷