বেঙ্গালুরু: এই গল্পের প্রক্ষাপট লেখা হয়েছিল সৌদি আরবের মরু প্রান্তরে৷ তখন ওঁরা স্কুল পড়ুয়া৷ একে অপরের প্রতি ভালোলাগা থেকে একটু একটু করে জন্ম নিচ্ছে ভালোবাসা৷ কিন্তু, ওঁদের ভালোবাসর পথ মোটেই সহজ ছিল না৷ এসেছে অনেক বাধা৷ অনেক লড়াই৷ অনেক সংগ্রামের পর পরিণতির পথে এই যুগলের প্রেমগাথা৷
আরও পড়ুন- পুলিশ ভ্যানে আফতাব, তলোয়ার হাতে গাড়ির সামনে ঝাঁপাল জনাকয়েক
সাধারণত কোনও নারী-পুরুষের প্রেমে পরিবারের সম্মতি না থাকলে, তাঁদের যা যা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, এক্ষেত্রে সেই বাধা ছিল বহু গুণ বেশি৷ কারণ এই গল্পের ‘হিরো-আর হিরোইন’ যে সমকামী৷
একজনের নাম আধিলা নাসারিন, অন্যজনের ফতিমা নুরা৷ সম্প্রতি তাঁরা একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকার নিয়ে আংটি বদল করেছেন। সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে একে অপরকে আংটি পরিয়ে কেক কেটেছেন৷ করেছেন ফটোশুট৷ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
আনুষ্ঠানিক ভাবে ফতিমা আর আধিলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি এখনও৷ আইনি ভাবেও তাঁরা বিবাহিত নন। তবে আগামী দিনে বিয়ে করার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা রয়েছে এই জুটির৷ ফতিমারা যখন সৌদি আরবে থাকতেন, তখন থেকেই তাঁদের পরিচয়৷ দু’জনেই তখন স্কুল পড়ুয়া। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী৷ সেই প্রেমই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীর হয়েছে। একে অপরের হাত শক্ত করে আগলে শুরু হয় ভালোবাসার সংগ্রাম৷
স্কুলের পাঠ শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে চলে আসেন ফতিমা এবং আধিলা৷ তাঁরা দু’জনেই দক্ষিণী রাজ্য কেরলের বাসিন্দা। ভারতে আসার পর ডিগ্রি কোর্সের পড়াশোনা করেন তাঁরা। কিন্তু, কোভিড পরিস্থিতিতে ফতিমাকে নিয়ে সৌদিতে ফিরে যান তাঁর বাবা-মা।
সৌদিতে যাওয়ার পর ফতিমাই তাঁর পরিবারকে আধিলার কথা জানান৷ বদলে যায় পরিস্থিতি। জানাজানি হয় ফতিমার বাড়িতেও৷ দুই বাড়িতেই তখন তুমুল অশান্তি৷ কোনও পরিবারই সন্তানদের এই সমলিঙ্গ প্রেম মেনে নিতে নারাজ৷
ফতিমা আর আধিলাকে আলাদা করতে কোনও কসুর রাখেনি তাঁদের পরিবার। অনেক বকাঝকা করেছেন৷ ভয় দেখিয়েছেন৷ এমনকি শারীরিক অত্যাচার করতেও দিধা করেননি৷ কোনও কিছুতেই তাঁদের আলাদা করতে না পেরে ফতিমা এবং আধিলার বিয়ে দেওয়ার তোরজোর শুরু করেন তাঁদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনরা। পাত্র দেখতেও শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা৷ তবুও একে অপরের হাত ছাড়েননি ফতিমারা।
এদিকে, পড়াশোনা শেষে দু’জনেই চেন্নাইয়ে চাকরি পান। গত মে মাসে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন৷ আশ্রয় নেন চেন্নাইয়ে এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠী পরিচালিত একটি হোমে৷ সেখানে লিভ-ইন শুরু করেন ফতিমা এবং আধিলা৷ কিন্তু, সেখানেও আসে বাধা৷ প্রথমে পরিবার, পরে হোমে হানা দেয় পুলিশ৷ আধিলার বাবা-মা এসে তাঁদের দু’জনকেই নিয়ে যান মুপ্পাথাডমের বাড়িতে। সেখানে আসে ফতিমার পরিবার৷ মেয়েকে নিয়ে যান নিজেদের বাড়িতে।
জোর করে আলাদা করে দেওয়া হয় দুটি ভালোবাসার মানুষকে। কিন্তু, হার মানতে শেখেনি ওঁরাও ৷ আইনি লড়াই শুরু করেন আধিলা। ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পেতে দ্বারস্থ হন কেরল হাই কোর্টে। এক সঙ্গে থাকতে চেয়ে আবেদন জানান তিনি৷ পরিবারের সদস্য এবং পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিরাপত্তারও আর্জি জানান।
গত ৩১ মে কেরল হাই কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে ফতিমা এবং আধিলাকে এক সঙ্গে থাকার অনুমতি দেয়। এর পর থেকে নির্বিঘ্নে একত্রেই রয়েছেন এই যুগল। পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর আধিলা এবং ফতিমার পক্ষেই রায় দেন কেরল হাই কোর্টের বিচারপতি।
একই আইটি সংস্থার অফিসে একসঙ্গেই কর্মরত রয়েছেন তাঁরা৷ আদালতের রায়ের পর কেউ আর তাঁদের বিরক্ত করেন না৷ তবে ভারতে সমলিঙ্গ বিবাহ এখনও পর্যন্ত আইন সম্মত নয়। তাই এখনও এক হয়নি চারহাত৷ শুধু আংটিবদলটুকু সেরে রেখেছেন তাঁরা৷ ভবিষ্যতে বিয়ে করে জীবনসঙ্গী হতে চান আধিলা-ফতিমা৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>