নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস, দিল্লির নিজামুদ্দিন, তাবলীগী জামাত। এই নিয়ে প্রথমদিকে কম বিতর্ক হয়নি। অভিযোগ তোলা হয়, তাবলীগী জামাতের কারণেই দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়েছে৷ সে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কম হয়নি। এবার তাবলীগী জামাতের একটি মামলার শুনানিতে বাক স্বাধীনতা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পর্যপেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের৷ স্পষ্ট জানানো হল, এই মুহূর্তে দেশে বাক স্বাধীনতার চরমভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে! মূলত দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, যে তারা তাবলীগী জামাতের ব্যাপারে ভুল খবর ছড়াচ্ছে। সেই মামলার শুনানিতেই আজ এই মন্তব্য করা হয়৷
প্রথম থেকেই তাবলীগী জামাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছিল, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কালেও তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেনি, তাদের জমায়াতের ফলেই দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সেই সংক্রান্ত ব্যাপারেই দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, তারা বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে৷ সেই মামলার শুনানিতে এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে বলেন, সম্প্রতিককালে দেশে বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহার বেড়ে গিয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমের উচিত, আরও সংযত হয়ে খবর পরিবেশন করা৷ না হলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ যদিও কেন্দ্রের তরফে গণমাধ্যমের হয়ে যে হলফনামা পেশ করা, তাতে এই ধরনের প্রতিবেদনের কোনও উল্লেখ করা হয়নি৷
এ ব্যাপারে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকেও কার্যত ভর্ৎসনা করেন তিনি। বলেন, ‘‘আপনি আদালতের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না। যিনি এই মামলা দায়ের করেছেন তিনি একজন জুনিয়র অফিসার। গণমাধ্যমের ব্যাপারে তিনি কোনও বিষয় উল্লেখ করেননি, তার কাছে কি এর আগে কোনো প্রমাণ আছে?’’ এদিনের হলফনামার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷ প্রধান বিচারপতির এই কথায় সলিসিটর জেনারেল বলেন, তিনি পুরো বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন৷ এদিনের হলফনামা বাতিল হয়ে যাওয়ায় নতুন করে হলফনামা পেশ করতে হবে৷ এই মামলার শুনানি দু’সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকা ৩০ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ জানা যায়, সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ তাবলীগী জামাত সদস্যরা করোনাভাইরাস সংক্রামিত৷ এরপর এই গোটা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়৷ গত ১৩ থেকে ২৪ মার্চ কমপক্ষে ১৭,০০০ মানুষ তাবলীগী জামাতে অংশগ্রহণ করেন৷ সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়৷ যদিও সেই সময় দেশে লকডাউন বা সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হয়নি৷ কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে বারবার অধিকাংশ গণমাধ্যম নিজামুদ্দিনের ঘটনাকে সামনে রেখে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির জন্য তাবলীগী জামাতকে দায়ী করে এসেছে৷