লকডাউনে বাড়ি বাড়ি জল-খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন এই ডেপুটি কমিশনার

লকডাউনে বাড়ি বাড়ি জল-খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন এই ডেপুটি কমিশনার

কোহিমা: ভারত-মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নাগাল্যান্ডের ছোট্ট জেলা মোন৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো দীর্ঘ লকডাউনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই জেলার মানুষ৷

মোনের অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী৷ লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন তাঁরা৷ কাজ নেই কারিগরি শিল্পীদের হাতেও৷ এখানকার কারিগররা নেকলেস, চুলের ব্রাশ, টুপি এবং কাঠের কাজের জন্য বেশ পরিচিত৷ কিন্তু লকডাউনের জেরে উপার্জন একেবারেই বন্ধ হয়েছে এই কারিগরদের৷ এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন মোনের ডেপুটি কমিশনার থাভাসিলান কে৷ জেলার বাসিন্দাদের কেবল মাত্র বেঁচে থাকার রসদই নয়, তাঁদের উপার্জনের বন্দোবস্তও করলেন তিনি৷

থাভাসিলান কে বলেন, ‘‘লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে মানুষ৷ লকডাউন আর সামাজিক দূরত্বের নিয়মে ভাটা পড়েছে পর্যটনে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসা৷ এই অবস্থায় আমরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিই, যাতে উপকৃত হতে পারেন স্থানীয় মানুষ৷’’

হিলস এরিয়া ডেভলপমেন্ট অরগানাইজেশন (HADO) এবং একটি স্থানীয় গির্জার সঙ্গে  হাত মিলিয়ে ‘লোকাল গ্রিনস’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন৷ এই প্রকল্পে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাটাকা সবজি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়৷ ২৩টি গ্রামের মোট ১৫০ জন চাষীর কাছ থেকে সরাসরি সবজি ও ফল কিনে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে৷  

মোনের ডেপুটি কমিশনার বলেন, ‘‘লকডাউনে বাইরে বেরনো বন্ধ হওয়ায় চাহিদাও কমতে শুরু করেছিল৷ কমছিল কৃষকের উপার্জন৷ এই পরিষেবায় মধ্যস্থতাকারীদের সরিয়ে ফার্ম থেকে সবজি নিয়ে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মানুষের ঘরে৷ ফলে একদিকে যেমন মানুষকেও বাইরে বেরনোর ঝুঁকি নিতে হচ্ছেনা, অন্যদিকে অর্থ আসছে চাষীর ঘরেও৷

লকডাউনে ব্যাংকে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বেশকিছু বিধিনিষেধ রয়েছে৷ এই অঞ্চলে ক্যাসলেস পরিষেবা এখনও চালু হয়নি৷ ফলে নগদ অর্থের জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ এই সমস্যা দূর করতে ইন্ডিয়ান পোস্ট পেমেন্ট ব্যাংক (আইপিপিবি) এবং স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে বলা হয়৷ যাতে গ্রামবাসীরা সহজেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারেন৷ 

মোন জেলায় দীর্ঘ দিন ধরেই জলের সমস্যা বেশ প্রকট৷ করোনা প্যানডেমিক এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে৷ তাই মানুষের ঘরের দোরগোড়ায় জল পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন৷ 6909194806 বা 7630059057 নম্বর ডায়াল করলেই বাড়ির দরজায় পৌঁছে যাবে জল৷ দাম স্থির৷ ১০০০ লিটার জলের জন্য দিতে হবে ৫০০ টাকা৷ 

শুধু জলই নয়, এই সংকটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ ও জরুরি জিনিসপত্র৷ হোম ডেলিভারি ফি মাত্র ১০ টাকা৷ তবে প্যাকেটের ওজন ১০ কিলোর বেশি হলে দিতে হবে বাড়তি আরও ১০ টাকা৷ অন্যদিকে আবার স্থানীয় মওনিং গ্যাস এজেন্সির সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুরু হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের হেম ডেলিভারিও৷ প্রান্তিক শ্রেণির মানুষরা যাতে সরকারের নার্ধারিত মূল্যে খাদ্যশস্য পায়, তা নিশ্চিত করতে  প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড এবং অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন থাভাসিলান৷ অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী গরিব অন্ন যোজনায় জুন মাস পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে খাদ্যশস্য৷ 

গরিব মানুষের মুখে অন্ন জোগাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ফুড ব্যাংক৷ এই ফুড ব্যাংকে মানুষ টাকা বা বাড়তি রেশন দান করতে পারবেন৷ ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ এবং খাদ্যশস্য তুলে দেওয়া হবে দুঃস্থ মানুষের হাতে৷ এর ফলে জেলার ১,৫০০ জন মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান এই আইএএস অফিসার৷ এই জেলায় এখনও পর্যন্ত একজন করোনা আক্রান্তের হদিশও মেলেনি৷ কিন্তু কোভিড-১৯ কে হালকা ভাবে নিতে নারাজ স্থানীয় প্রশাসন৷ সংক্রমণ রুখতে তাই ‘অ্যাকটিভ কেস সার্চ’ কৌশল নিয়েছে মোন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 4 =