নয়াদিল্লি: দীর্ঘ ১৩৪ বছরের বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে দেশে শীর্ষ আদালত৷ অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি মামলার রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে গিয়ে৷ সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর অবশেষে নিজের প্রতিক্রিয়া দিলেন অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি মামলার বিতর্কে থাকা লালকৃষ্ণ আডবাণী৷
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে লালকৃষ্ণ আডবাণী সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘ন্যায়বিচার’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ বলেছেন, ‘‘আমি ন্যায়বিচার পেয়ছি৷ নিজেকে অত্যন্ত আশীর্বাদধন্য মনে করছি, সুপ্রিম কোর্ট তার সর্বসম্মত রায় দিয়ে অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে ভগবান রামের জন্য একটি দুর্দান্ত মন্দির নির্মাণের পথ সুগম করেছে৷ আমি আজ অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের দেওয়া ঐতিহাসিক রায়কে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি৷ আমার সমস্ত দেশবাসীকে শুভেচ্ছা৷ এই রায় আমাদের জন্য উজ্জ্বল মুহূর্তের৷ কারণ, স্বাধীন ভারতের এটাই ছিল সর্বশক্তিমানের জন্য সব থেকে বড় গণআন্দোলন৷ সেই আন্দোলনে অবদান রাখার সুযোগ পাওয়ায় আমি আনন্দিত৷ আমি মনে করছি, সুপ্রিম কোর্ট তার সর্বসম্মত রায় অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে ভগবান রামের জন্য একটি দুর্দান্ত মন্দির নির্মাণের পথ সুগম করবে৷’’
আজ ১ হাজার ৪৫ পাতার রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্টের তরফে লালকৃষ্ণ আডবাণীর ভূমিকা কড়া ভাষায় সমালোচনা করা হয়৷ কেননা, অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি মামলার বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতা৷ কিন্তু হঠাৎ তাঁকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক দেখা দিয়েছিল?
LK Advani: It is a moment of fulfillment for me because God Almighty had given me an opportunity to make my own humble contribution to the mass movement, the biggest since India’s Freedom Movement, aimed at the outcome which SC’s verdict today has made possible. #AyodhyaJudgment https://t.co/3ri1Uuu74q
— ANI (@ANI) November 9, 2019
ইতিহাস বলছে, সেই ১৫২৮ সাল শুরু হওয়া বিবাদ ২০১৯-এ হটকেট৷ ইতিহাস বলছে, ১৫২৮ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়৷ হিন্দুত্বপন্থী সংগঠনের দাবি, মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়৷ এরপর ১৮৫৩ সালে বন্দির বনাম মসজিদ ঘিরে সরকারি খাতায় প্রথম সংঘর্ষের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়৷ ১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ আমালে হিন্দু ও মুসলিমদের প্রাথনার জন্য পৃথক পৃথক দুটি স্থান নির্দেশ করে দেওয়া হয়৷
স্বাধীনতা দু’বছর পর ১৯৪৯ সালে রামের মূর্তি মসজিদের মধ্যে স্থাপন করা ঘিরে সংঘর্ষ তৈরি হয়৷ প্রথম আদালত গড়ায় অযোধ্যা মামলা৷ এর কয়েক বছর পর ১৯৮৪ সালে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য দাবি উঠতে থাকে৷ ১৮৮৭ সালে জেলা আদালত মসজিদের দরজা খুলে দেয়৷ একই সঙ্গে বিতর্কিত জমিতে হিন্দুদের আরাধনার অনুমতি দেয়৷ এরপর ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি৷
এর পরের বছর ১৯৯০ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণী রাম মন্দির নির্মাণের সমর্থনে দেশে রথযাত্রা করেন৷ বিজেপির সেই রথযাত্রা আজও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে৷ বিজেপির রথযাত্রার পর ভারতীয় গণতন্ত্রে নেমে আসে কলঙ্গিত অধ্যায়৷ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়৷ হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশেজুড়ি৷ কয়েক লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ হিংসার আগুন থামিয়ে গড়ায় মামলায়৷
২০০২ এপ্রিলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট অযোধ্যার জমি মামলা ওঠে৷ ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায়দানে বিতর্কিত জমি ৩ ভাগে ভাগ করে রামলাল্লা, নির্মোহী আখড়া ও সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়৷ ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় মামলা৷
২০১১ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশের নির্দশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এরপর চলতে থাকে লম্বা শুনানি৷ চলতি বছর ৬ অগস্ট প্রতিদিনের ভিত্তিতে টানা ৪০ দিন এই মামলার শুনানি শুরু হয়৷ ১৬ অক্টোবর শুনানি শেষ করে আজ রায় ঘোষণা করে দেশের শীর্ষ আদালত৷