ভারতীয় বায়ুসেনায় লেখা হল নতুন ইতিহাস, এক সঙ্গে যুদ্ধবিমান ওড়ালেন বাবা-মেয়ে

ভারতীয় বায়ুসেনায় লেখা হল নতুন ইতিহাস, এক সঙ্গে যুদ্ধবিমান ওড়ালেন বাবা-মেয়ে

নয়াদিল্লি:  ভারতীয় বায়ুসেনার মুকুটে আরও এক গর্বের পালক৷ লেখা হল নতুন এক রোমহর্ষক ইতিহাস৷ ককপিটে বসে একসঙ্গে যুদ্ধ বিমান ওড়ালেন ভারতীয় বায়ুসেনায় কর্মরত বাবা ও মেয়ে৷ কখনও মেঘ চিরে তাঁরা উড়ে গেলেন দূর আকাশে৷ আবার মুহূর্তে নেমে এলেন কয়েকশো ফুট নীচে৷ অস্ত্র সজ্জিত বিমান নিয়ে মাঝ আকাশে বাবা-মেয়ের এই যুগলবন্দীতে গর্বিত গোটা দেশ৷ 

ভায়তীয় বায়ুসেনায় ফাইটার পাইলট মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির ছাড়পত্র মিলেছে সাত বছর আগে৷ এর পর অনেক মহিলাই বিমান উড়িয়েছেন আকাশে৷ রয়েছে অনেক কৃতিত্বের দৃষ্টান্ত৷ কিন্তু, ভারতীয় বায়ু সেনার ৮৯ বছরের ইতিহাসে বাবা-মেয়ের বিমান ওড়ানোর নজির এই প্রথম৷ নির্দিষ্ট ফরমেশনে বিমান উড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন তাঁকে৷ এক সঙ্গে ডানা মেললেন ফাইটার পাইলট এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা।

আরও পড়ুন- OTP নিয়ে বচসা, ওলা চালকের হাতে প্রাণ হারালেন যাত্রী

গত ৩০ মে’র ঘটনা৷ ভারতীয় বায়ুসেনায় নতুন ইতিহাস লেখেন বাবা-মেয়ের জুটি৷ কর্ণাটকে বিদার বায়ুঘাঁটিতে ব্রিটিশ হক-১৩২ অ্যাভভান্সড জেট ট্রেনার্স বিমানের ফর্মেশনে ওড়েন তাঁরা। কিন্তু, এতদিন আড়ালেই ছিল এই ঐতিহাসিক ঘটনা৷ তবে হঠাৎ করেই যেন তাঁরা এসে পড়লেন লাইমলাইটে৷ মঙ্গলবার নেট পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে বাবা এবং মেয়ের যুগলবন্দীর ছবি৷ সে দিনের ঘটনাকে নিজের জীবনের সবথেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা। 

একই ফর্মেশনে বাবা এবং ছেলের যুদ্ধবিমান ওড়ানোর নজির ভারতীয় বায়ুসেনায় একাধিক। কিন্তু বাবা আর মেয়ের জুটি এর আগে দেখা যায়নি৷ সেই শূন্যতাই যেন পূরণ করলেন ফাইটার পাইলট এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা। তবে সময় লেগে গেল সাত বছর৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, গত বছর অর্থাৎ ২০২১-এ ভারতীয় বায়ুসেনায় ফাইটার পাইলট হিসেবে যোগ দেন অনন্যা। তাঁর বাবা সঞ্জয় শর্মা ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় বায়ুসেনায় সদস্য৷ গত ৩০ মে নতুন ইতিহাস লেখেন তাঁরা৷ 

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, ইতিহাস শুধু ভারতে নয়, বাবা-মেয়ের এই জুটি সম্ভবত গোটা  বিশ্বে ইতিহাস রচনা করেছেন৷ সেন্টার ফর এয়ার পাওয়ার স্টাডিজের ডিরেক্টর জেনারেল এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া (অবসরপ্রাপ্ত)-র কথায়, ‘এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং ফ্লাইং অফিসার অনন্যা হয়ত বড় কোনও নজির গড়েছেন। কারণ বিশ্বের কোনও দেশে আজ পর্যন্ত  বায়ুসেনায় বাবা এবং মেয়ে একসঙ্গে যুদ্ধবিমান ওড়ানোর কথা শুনিনি।’

অনন্যার রক্তেই রয়েছে উড়ান৷ বিমান ওড়ানোর স্বপ্ন তাঁর ছোট থেকেই৷ কিন্তু ককপিটের রাস্তা সহজ ছিল না! একুশ শতকের শুরুতেও যুদ্ধবিমানের পাইলট পদটি ছিল শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যে। ২০১৬-য় প্রথম বদল আসে৷ যুদ্ধবিমানের ককপিটে পরীক্ষামূলকভাবে মহিলাদের বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। সেই সিদ্ধান্তে স্বপ্ন সফলের রাস্তা খুলে যায় অনন্যার কাছে৷  শর্মা পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ জানান, ভারতীয় বায়ুসেনায় বড় হয়ে ওঠা অনন্যার কাছে ফাইটার পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার চেয়ে আর কোনও কিছুই বড় ছিল না৷ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিনিউকেশনে বি.টেক করার পরেই ভারতীয় বায়ুসেনার ফ্লাইয়িং ব্র্যাঞ্চের প্রশিক্ষণের জন্য তিনি নির্বাচিত হন। 

ভারতীয় বায়ুসেনায় এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মার অভিজ্ঞতাও বিস্তর। এক সময় মিগ-২১ স্কোয়াড্রন এবং ফ্রন্টলাইন ফাইটার স্টেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ সঞ্জয় বলেন, ‘অনন্যা সবসময়ই বলত, পাপা  আমি তোমার মতো ফাইটার পাইলট হতে চাই। কমিশনড হওয়ার পর ও যখন ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা হয়ে আমায় স্যালুট করল, তখন গর্বে আমার বুক ফুলে উঠেছিল।’