পাঁচ দিনে পড়ল কৃষক প্রতিবাদ, দিল্লি অবরুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা

রাজধানী দিল্লি একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

নয়াদিল্লি: নয়া কৃষিবিলের বিরোধিতায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের কৃষকরা যে প্রতিবাদ করছেন তা আজ পাঁচ দিনে গিয়ে পড়ল। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে রাজধানী দিল্লি একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহা কৃষকদের যে শর্ত দিয়েছিলেন তারা তা মানতে একেবারেই রাজি নয়। অমিত শাহ তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সরকারি ঠিক করে দেওয়া বুরারি ময়দানে কৃষকদের চলে যেতে হবে। ৩ ডিসেম্বরে চাষীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা এই শর্ত মানতে প্রস্তুত নন। উল্টে তারা হুমকি দিয়েছেন, রাজধানী দিল্লির পাঁচটি প্রবেশ পথ অবরুদ্ধ করা হবে! তাই আপাতত পরিস্থিতি যে বেশ জটিল তা বলাই বাহুল্য‌।

কৃষকদের প্রতিবাদে জেরে ইতিমধ্যেই রাজধানী ব্যাপক উত্তেজিত। জায়গায় জায়গায় ট্রাফিকের সমস্যা, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান এবং বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে যারা বুরারি ময়দানে গেছেন তারা সেখান থেকে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়ে রাখছেন। কিন্তু প্রতিবাদী কৃষকদের অধিকাংশই দাবি করছেন, বুরারি ময়দান আসলে খোলা জেলখানা। সেখানে গিয়ে কোনরকম আলোচনা করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের যতক্ষণ এই নতুন কৃষি বিল প্রত্যাহার না করে নিচ্ছে ততদিন আন্দোলন চলবে। ইতিমধ্যে যে খবর তাতে জানা গিয়েছে, হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার রাস্তা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে ঢোকার রাস্তা অবরুদ্ধ করেছে প্রতিবাদী কৃষকরা। এই পরিপেক্ষিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে যদি কোনরকম ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে তারা বাকি রাস্তা অবরোধ করবে। ইতিমধ্যে এই নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে শুরু করে কংগ্রেসের মুখপাত্র রনদীপ সিং সুরজেওয়ালা কেন্দ্রকে আক্রমণ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যাতে দ্রুত কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তার আবেদন করা হয়েছে দিল্লির আম আদমি পার্টির তরফে। এদিকে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হায়দারাবাদে গিয়ে জনসভা করতে পারছেন, কিন্তু দিল্লিতে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারছেন না। যদিও কৃষকদের বক্তব্য, তাদের সঙ্গে সরাসরি সরকারের আলোচনা হবে, কিন্তু তারা নিজেদের প্রতিবাদে কোন রাজনৈতিক রঙ লাগাতে দেবেন না। রাজনৈতিক কোনো নেতা বা মন্ত্রী তাদের প্রতিবাদ মঞ্চে স্থান পাবেন না।

প্রতিবাদী কৃষকদের স্পষ্ট বক্তব্য, তাদের কাছে আগামী ৪ থেকে ৫ মাসের খাদ্য সামগ্রী মজুত আছে। তাই তারা তাদের বিক্ষোভ এবং আন্দোলন কোন মতেই থামাবেন না। এদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রত্যেক দিল্লিবাসীকে কৃষকদের সাহায্যের বার্তা দিয়েছেন। একই রকম ভাবে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও প্রত্যেক কংগ্রেস কর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে তারা কৃষকদের সবরকম সাহায্য করেন। যদিও রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, নতুন কৃষিবিদের কারণে কৃষকরা নতুন অধিকার এবং নানা ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় সরকার নতুন কৃষি বিল প্রসঙ্গে তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকছে। অতএব একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, এই পরিস্থিতি খুব সহজে ইতিবাচক মোড় নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 8 =