বীরেন ভট্টাচার্য, গাজিপুর: আদতে জায়গাটি দিল্লি-নয়ডা সীমানা, অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির সংযোগরক্ষাকারী সীমানা। দুই রাজ্যকে যুক্ত করেছে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, দিল্লি-মেরঠ এক্সপ্রেসওয়ে। ভরা ডিসেম্বরে সেখানে তাপমাত্রা নামে ৪ ডিগ্রিরও কম, কখনও তা থামে ২ ডিগ্রিতে। আর এমন একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ৩৫দিন ধরে চলছে কৃষকদের আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের আনা কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন, শক্ত মেরুদণ্ডের মানুষগুলো কোনওভাবেই কোনওরকম সংশোধনী বা বিকল্পে ভুলতে চান না। তাঁদের দাবি একটা, এই সর্বনাশা আইন প্রত্যাহার করতে হবে। বুধবার দুপুর ২টোয় নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সরকারপক্ষ। তবে তার আগেরদিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কৃষকরা অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভোর না হতেই খুলে গিয়েছে লঙ্গরখানা। সেখানে তৈরি হচ্ছে জলখাবার, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজের মেনু। ভিন রাজ্য থেকে ট্রাকে আসছে ফলমূল, সব্জি। আন্দোলনরত কৃষক নেতারা জানালেন, প্রতিটি জেলাভিত্তিক আলাদা করে ক্যাম্প বা শিবির তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের ব্যানার। সেই ব্যানারকে সামনে রেখেই চলছে আপোষহীন সংগ্রাম।
ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে দেখার সময় এমন একটি লঙ্গরখানায় কথা হচ্ছিল ৭৪ বছরের চৌধুরী মহেন্দ্র সিং এর সঙ্গে। জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও মানুষটিকে মানসিকভাবে তরুণ এবং সুদৃঢ় ঠেকল। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা চৌধুরী মহেন্দ্র সিং জানালেন, “প্রতিদিন একবার করে বাড়ি যাই। স্নান করে, জামা কাপড় পাল্টে আবার চলে আসি এখানে। বাড়িতে ছোটো ভাই চাষের কাজ দেখাশোনা করে।” নিজের গ্রামে ১৫ একর মানে প্রায় সাড়ে ৩৭ বিঘা জমি রয়েছে মহেন্দ্র সিং-এর। টানা ৩৫ দিন তিনি বাড়ির বাইরে টানা গাজিপুর সীমানায় পড়ে রয়েছেন তিনি। দাবি একটাই, কৃষি বিল প্রত্যাহার করতেই হবে, নাহলে আন্দোলন চলবে।
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা ধর্মেন্দ্র জানালেন, আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাজপথে কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া হবে। সেখানে কৃষি বিলের বিভিন্ন বিভিন্ন দিক নিয়ে তৈরি করা ট্যাবলো থাকবে। কোনও ট্যাবলোয় তুলে ধরা হবে কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে চুক্তিচাষের পর কৃষকদের বেহাল দশা, কোনওটায় তুলে ধরা হবে এমএসপির কমে ফসল কেনা, এইরকম নান দিক তুলে ধরে ট্যাবলো বের করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ১ লক্ষ ট্রাক্টর নামবে সেই দিন, রাখা হবে ২০০টি ট্যাবলো। প্রায় ১০ লক্ষ কৃষক অংশ নেবেন সেদিন।” ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মেরঠ জেলার নেতা মোহিত তালিয়ান, জানালেন, “তেরঙ্গা নিয়ে আমরা যাব দিল্লির পথে। যদি সরকার তেরঙ্গার ওপর জলকামান দাগে, তাহলেই স্পষ্ট হবে এই সরকার কতটা দেশভক্ত বা জাতীয়তাবাদী।” কথা বলতে বলতেই দেখা গেল গাড়ি করে আন্দোলনস্থলে পৌঁছাচ্ছে আপেল, কমলালেবু, আনারসের মতো ফলমূল। দেশএর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিলছে সাহায্য, এমনই দাবি আন্দোলনরত কৃষকদের। বৃহত্তর আন্দোলনে নামার আগে তাঁদের নজর বুধবারের বৈঠকের দিকে।