নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ সেই সঙ্গে জানান, সাংবাদিক বৈঠক করে ধাপে ধাপে এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানাবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলতেই ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ পাঁচটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই আর্থিক প্যাকেজ৷ অর্থনীতি, পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, জনসংখ্যা এবং চাহিদা৷ মূল অগ্রাধিকার থাকবে উৎপাদন বাড়ানোর উপর। তাই জোর দেওয়া হবে চারটি ‘L’-এর উপর। ল্যান্ড অর্থাৎ জমি, লেবার অর্থাৎ শ্রম, লিক্যুইডিটি অর্থাৎ বাজারে অর্থের যোগান এবং ল’ অর্থাৎ, আইন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, লোকাল ব্র্যান্ডকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড করে তুলতে হবে। সে জন্য তাদের উৎসাহ দেওয়া হবে। গ্লোবাল ভ্যালু চেইন ও সাপ্লাই চেইন এই উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। ৪০ দিনের মধ্যে পিপিই, এন-৯৫ মাস্কের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আমাদের নিজেদের শক্তিতে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে৷ তবে আত্মনির্ভর হওয়া মানে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়৷ এর আগেও ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটির প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কেভিড বিরোধী লড়াইয়ে ভারত অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে৷ সারা বিশ্বের দরবারে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে ভারত৷ তার জন্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে ভারত৷
গরিবদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে মোদি সরকার৷ গত ৬ বছরে নরেন্দ্র মোদি জমানায় অনেক আর্থিক সংস্কারের কাজ হয়েছে৷ গরিবদের জন্য জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সরাসরি নগদ হস্তান্তর করা হয়েছে উপভোক্তাদের। ভারত আত্মনির্ভর না হওয়া পর্যন্ত এই সংস্কারের কাজ চলবে৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, জনধন প্রকল্পে গরিবদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেওয়া হচ্ছে৷ সেই টাকা আনতে ব্যাংকে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই৷ ব্যাংক মিত্ররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসছেন৷ উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে তিন মাসের জন্য গ্যাস দেওয়া হচ্ছে৷ আজ ভারত যা করতে পেরেছে, বিশ্ব তা করতে পারেনি৷
এ ছাড়াও কৃষি, শিল্প-সহ প্রায় সব ক্ষেত্রে বিপুল সংস্কার হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ করদাতাদের কর দেওয়ার পদ্ধতি অনেক সরল করা হয়েছে৷ সীতারমন জানান, ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের ব্যবস্থা করা হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য৷ এক বছরের ঋণের জন্য এক বছরের মোরাটোরিয়াম দেওয়া হবে৷ এর জন্য কোনও গ্যারান্টি লাগবে না৷
এমনকি যে সংস্থায় বিনিয়োগ এক কোটি এবং টার্নওভার ৫০০ কোটি টাকা, এখন থেকে সেই সংস্থাকেও মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ধরা হবে৷ এর ফলে আরও বেশি সংস্থা মাইক্রো ক্ষেত্রের অন্তর্ভূক্ত হবে৷ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে তা ছোট শিল্প বা উদ্যোগ বলে বিবেচিত হবে। ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে তা মাঝারি উদ্যোগ বলে গণ্য করা হবে৷ এদিকে, ক্ষুদ্র বা মাইক্রো শিল্পে লগ্নি সীমা বাড়িয়ে ১ কোটি করা হবে বলে জানা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ আগে যা ছিল ২৫ লক্ষ টাকা৷ এখন বিনিয়োগ করা মূলধনের পরিমাণের সঙ্গে বাৎসরিক টার্নওভার যোগ করা হয়েছে ৷
এছাড়াও ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা হয়েছে যা অপেক্ষাকৃত সক্ষম ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য দেওয়া হবে৷ যে সব ছোট ও মাঝারি শিল্প আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে৷ ব্যাংকের টাকা শোধ করতে পারছে না, তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা হবে৷ চার বছরের জন্য এই ঋণ দেওয়া হবে, তার মধ্যে প্রথম এক বছর ঋণ পরিশোধ করতে হবে না৷ তিনি আরও জানান, ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি কেনাকাটায় গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা যাবে না। ঘরোয়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে সেই সুযোগ দিতে হবে। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ সহায়ক হবে বলেই আশা করছে কেন্দ্র৷ কোভিড পরবর্তী সময়ে কোনও বাণিজ্য মেলা, প্রদর্শনী হয়তো হবে না। তাই ই-মার্কেট লিংকেজের জন্য সরকার চেষ্টা করবে।
তিনি জানানা, নগরোন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চগুলিকে একটি নির্দেশিকা পাঠাবে৷ রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে যে সকল প্রকল্প চলছে, সেগুলির মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হবে৷ ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ টিডিএস এবং টিসিএস কমানো হবে৷ আগামীকাল থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হবে৷ এর ফলে ৫০ হাজার কোটির সাশ্রয় হবে৷ আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ৩০ নভেম্বর ২০২০ করা হবে৷ আগামী ৩ মাসের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১২ শতাংশের বদলে মূল বেতনের ১০ শতাংশ জমা দেবেন কর্মীরা। এর ফলে উপকৃত হবেন ২২ লাখেরও বেশি কর্মী। কেন্দ্র আরও তিনমাসের জন্য পিএফের অনুদান দেবে। ইপিএফেও তিনমাস অনুদান দেবে কেন্দ্র।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাকে ৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হবে। ৩০ হাজার কোটি টাকা লিক্যুইডিটি ঘোষণা করা হচ্ছে এনবিএফসি, হাউজিং ফিনান্স কোম্পানি, মাইক্রো ফিনান্স ইনস্টিটিউটগুলির জন্য। নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্স কোম্পানিগুলির জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার লিক্যুইডিটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারি ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে ৬ মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। কারণ, করোনা সংকটের জন্য তাঁরা কাজ করতে পারেনি। নির্মাণ কাজের ঠিকাদার বা যাঁরা সরকারকে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করেন তাঁরা এই সুবিধা পাবেন।
শুধু তাই নয়, ঠিকাদাররা কোনও প্রকল্পের নির্দিষ্ট অংশ কাজ ইতিমধ্যে করে ফেললে সেই অনুপাতে ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা তাঁদের ফেরত দেওয়া হবে। যাতে তাঁদের নগদের সংকট না হয়।