নয়াদিল্লি: ইউটিউব ইউজারদের কাছে তিনি বেশ পরিচিত নাম। বিশেষ করে বিজ্ঞানের পড়ুয়াদে কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। যাঁরা জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্ততি নিচ্ছেন, তাঁদের কাছে অলক স্যার এক চেনা নাম। কারণ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জয়েন্ট এন্ট্রান্স প্রস্তুতির পাঠ দিয়ে থাকেন অলক পাণ্ডে। নিজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে তাঁর। কিন্তু অনেকেই জানেন না অলক থেকে তাঁর অলক স্যার হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনী। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও অলক পাণ্ডের জীবন সফর চমকে দেবে আপনাকেও। কী ভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ড্রপ আউট এক ছাত্র শুধু টিউশন পড়িয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি এক সংস্থার মালিক হলেন, সেই গল্প কোনও রোমাঞ্চের চেয়ে কম নয়।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রপতির লড়াইয়ে শামিল লালু? মনোনয়ন জমা দিতে মঙ্গলবারই দিল্লিতে
অলক পাণ্ডের জন্ম উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে। ছোট থেকেই প্রবল অর্থকষ্টে বেড়ে ওঠা তাঁর। অলক তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র৷ সংসারের আর্থিক অনটন এমন জায়গায় পৌঁছয় যে বেঁচে থাকার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন তাঁর বাবা। সেখান থেকে তাঁদের ঠাঁই হয় একচিলতে ভাড়াবাড়িতে। প্রবল দারিদ্রের মধ্যে বেড়ে ওঠা অলক খুব শীঘ্রই শিখে যায় জীবনের লড়াই৷ সেই জায়গা থেকেই আজ লড়াকু ছেলেটা কোটিপতি-শিক্ষক অলক!
সংসারের বোঝা টানতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি শুরু করেছিল গৃহশিক্ষকতা। প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ারা ছিল কিশোর অলকের ছাত্রছাত্রী।পরিস্থিতির চাপে টিউশন পড়ানো শুরু করেছিলেন অলক ঠিকই৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটাই হয়ে উঠল তাঁর নেশা৷ পড়াতে ভীষণ ভাল লাগত তাঁর। তাই এই নেশাকেই পেশা করে ফেললেন এই তরুণ৷ একটি সাক্ষাৎকারে একবার অলক বলেন, ‘‘টাকার প্রয়োজনে টিউশন পড়ানো শুরু করেছিলাম। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর বিষয়টা আমার ভাল লাগতে শুরু করল। তখনই ভেবে নিয়েছিলাম এটাকে পেশা হিসেবে নেব৷’’
পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী অলক ভর্তি হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে৷ কিন্তু পড়া শেষ করতে পারেননি টাকার জন্য। ছোট থেকে অভাবের যুঝতে থাকা অলক সিদ্ধান্ত নেন, আর নয়। এ বার কিছু একটা করতেই হবে৷ যাতে এই দুর্দিন শেষ হয়৷ এলাহাবাদে ফিরে একটি কোচিং সেন্টারে পড়ানোর কাজ শুরু করেন। মাস গেলে বেতন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
এরই মধ্যে ২০১৭ সালে ইউটিউবে একটি চ্যানেল খোলেন অলক। কোচিং সেন্টারে পড়ানোর কাজ ছেড়ে দেন। ইউটিউবে পদার্থবিদ্যার প্রশিক্ষণই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর পূর্ণ সময়ের কাজ। কিছু দিনের মধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার৷ চার হাজার সাবস্ক্রাইবার থেকে দু’বছরের মধ্যে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ লক্ষে৷ কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁর ইউটিউবের সাবস্ক্রাইবার আরও বাড়তে থাকে৷ ঘরবন্দি ছলে মেয়েদের কাছে অলক নিয়ে আসে নতুন অ্যাপ৷ ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকে সেই অ্যাপের সদস্য সংখ্যা৷ এক দিনে এক ধাক্কায় দু’লক্ষ হিট হওয়ার পর অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়৷
অলক জানান, প্রবল চাপে অ্যাপ বন্ধ হওয়ার পর তিনি গভীর চিন্তায় পড়েছিলেন। কারণ অনেকে হয়তো ভাববেন তাঁরা ঠকে গিয়েছেন। স্থির করেন সব টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। ‘লাইভ ক্লাস’ বন্ধ রেখে রেকর্ডিং সেশনের আয়োজন করেন অলক। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সেই প্রযুক্তিগত ত্রুটি সেরে যায়৷ হুহু করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়া শুরু হয়৷ চার দিনে ওই অ্যাপে নাম লেখান ৩৫ হাজার পড়ুয়া৷
অলকের এই অ্যাপের সাফল্য দেখার পর একটি বড় সংস্থা তাঁকে ৭৫ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল। শর্ত ছিল, তাদের হয়ে কাজ করতে হবে। যদিও হেলায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন অলক৷ আজ তাঁর স্টার্ট আপ সংস্থায় কাজ করেন মোট ১৯ হাজার কর্মী। তার মধ্যে রয়েছেন ৫০০ জন শিক্ষক, ২০০ জন অধ্যাপক এবং ২০০ জন বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। অ্যাপ দেখাশোনার কাজ করেন ১০০ জন প্রযুক্তিবিদ।
ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রপআউট একটি ছেলে আজ ভারতের অন্যতম ‘ইউনিকর্ন’ চালান। অর্থাৎ, তার সংস্থার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। অলকের এই গল্প বহু লড়াকু ছেলের কাছেই অনুপ্রেরণার৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>