দান বদলে শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী! এক ঢিলে একাধিক পাখি মারল বিজেপি!

দান বদলে শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী! এক ঢিলে একাধিক পাখি মারল বিজেপি!

মুম্বই: গত ১০ দিন ধরে চরম রাজনৈতিক নাটকীয়তার পর অবশেষে বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে৷ এর পরেও বাকি ছিল চমক৷ কারণ, রাজনৈতিক মহল প্রায় নিশ্চিত ছিল উদ্ধবের ইস্তফার পর মুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপি’র দেবেন্দ্র ফড়ণবীস৷ কিন্তু রাজনীতির কারবারিদের সেই সমীকরণ উল্টে দিয়ে শিবসেনায় বিদ্রোহের মূল কাণ্ডারীকেই আসন ছেড়ে দিল বিজেপি৷ সাংবাদিক বৈঠক করে দেবেন্দ্র ফড়ণবীস নিজে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী হবেন একনাথ শিন্ডে৷ এর পরেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন একনাথ৷ আর একনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর করে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারলেন বিজেপি নেতৃত্ব৷ অনেকেই বলছেন, সুপরিকল্পিত ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবির৷ 

আরও পড়ুন- মেশিনের সাহায্যে সুপার স্পিডে টিকিট বুক রেল কর্মীর, ভাইরাল ভিডিও

বিজেপি’র সমর্থনে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়তে চলেছেন বিদ্রোহী শিবসৈনিক একনাথ শিন্ডে৷ এই খবর নিশ্চিত হতেই শিন্ডে অনুগামী বিধায়করা গোয়ায় পাঁচতারা হোটেলে বসে মেতে উঠেছিলেন নাচে গানে৷ অন্যদিকে সাংবাদিক বৈঠক করে মোদী, শাহ, ফড়ণবীসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন একনাথ৷ এই নাটকের যবনিকা পড়তেই ফের চমক মারাঠা রাজনীতিতে৷ মহা টুইটে জানা যায়, দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসকে মুখ্যমন্ত্রী না করায় তিনি নাকি অসন্তুষ্ট৷ সেই কারণেই তিনি প্রকাশ্যে সরকারে সামিল হবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷ এর পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চায় দেবেন্দ্র সরকারে আসুক৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করুক ফড়ণবীস৷ 

নাড্ডার এই ঘোষণার পরই টুইট করেন অমিত শাহ৷ তিনি টুইটে লেখেন, ‘‘বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কথায় দেবেন্দ্র ফড়ণবীস বড় মনের পরিচয় দিয়ে মহারাষ্ট্র এবং মহারাষ্ট্রবাসীর ভালোর জন্য সরকারে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কেন একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ কেন ছাড়ল বিজেপি? এর নেপথ্য কারণ কী? এই সিদ্ধান্তে কি অন্যান্য রাজ্যে বিরোধী দলের অসন্তুষ্ট নেতাদের বার্তা দিতে চাইল বিজেপি? 

২০১৯-এর শেষে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছিল বালাসাহেবের দল৷ সর্বাধিক আসনে জয়ী হয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু, গোল বাধে সরকার গঠনের সময়৷ এই জোট সরকারের রাশ কার হাতে থাকবে, কোন সমীকরণে সরকার চলবে তা নিয়ে তৈরি হয় মতবিভেদ৷ শিবসেনার দাবি ছিল আড়াই বছর শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রী হোক৷ বাকি আড়াই বছর বিজেপি’র৷ কিন্তু সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি পদ্ম শিবির৷ তারা সাফ জানিয়ে দেয় শিবসেনাকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছাড়া হবে না৷  জোটের জট না খোলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জেতা শিবসেনা হাত মেলায় এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে। গঠিত হয় ‘মহাবিকাশ আগাড়ী’ জোট৷ মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ধব ঠাকরে৷ কিন্তু, সম্প্রতি দলের মধ্যেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন একনাথ শিন্ডে৷ শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বালাসাহেব-পুত্র উদ্ধব৷ 

কিন্তু প্রশ্ন হল যে শিবসেনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আসন নিয়ে সমঝোতা করতে চায়নি বিজেপি৷ সেই শিবসেনাকেই কেন মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছাড়ল কেন্দ্রের শাসক দল? তবে কি বাল ঠাকরের উত্তরাধিকারের হাত থেকে শিবসেনাকে বার করে আনতেই এই কৌশল নিল বিজেপি? উদ্ধব ঠাকরের রাজনৈতিক জীবন চূর্ণ করতেই কি এই কৌশলী চাল? আরও একবার নিজেদের হিন্দুত্বের ধারক-বাহক প্রমাণ করতেই এই সিদ্ধান্ত? নাকি, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে মরাঠি কার্ড খেলল দল? ফড়ণবীসের ডিমোশনের পিছনেও বা কী কারণ লুকিয়ে রয়েছে? বিজেপি’র এই কৌশলে অন্যান্য রাজ্যগুলির উপর কতটা প্রভাব পড়ে সেটা সময়ই বলবে৷ তবে অনেকেই মনে করছেন, শিন্ডেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী করে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের আগামী দিনে ঠাকরে শিবিরে যাওয়া কঠিন করে দিল বিজেপি নেতৃত্ব।