নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে কয়েক মাস ধরেই দেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে ছড়িয়েছে উত্তাপ। পাঞ্জাব হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য কৃষক নিজেদের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে রাজধানীতে হাজির হয়েছেন। অন্নদাতা কৃষকদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের ডঃ সুনীলমের গল্পটা খানিক আলাদা।
ডঃ সুনীলম ওরফে সুনীল মিশ্র মধ্যপ্রদেশের ভোপালের বাসিন্দা। দেশের গরীব কৃষকদের জন্য তিনি যেভাবে দেশময় ছুটে বেড়াচ্ছেন, দিনরাত যেভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন, তাতে ভারতের ২০২০-২১ সালের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর নাম নিঃসন্দেহে অমর হয়ে থাকবে। বয়সের গন্ডি ছাড়িয়েছে ৬০-এর কোটা। কৃষকদের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে তবু ক্লান্তি নেই ডঃ সুনীলমের।
সূত্রের খবর, বছর ষাটেকের এই প্রৌঢ় ভারতের কৃষকদের উন্নতিকল্পে কাজ করার জন্য হেলায় ছেড়েছেন সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা লক্ষাধিক টাকার ফেলোশিপ অফার। এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও মোটা টাকার চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে সম্প্রতি তিনি কৃষি আইন বাতিলের দাবি তুলছেন। হয়ে উঠেছেন কৃষক আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ।
ডঃ সুনীলম (সুনীল মিশ্র) বায়ো-মেডিক্যাল ইলেক্ট্রনিকসে পিএইচডি করেছেন। জাতিগত বৈষম্য যাতে প্রকট হয়ে উঠতে না পারে সে কথা মাথায় রেখেই পদবী ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কৃষকদের জন্য কাজ করার জীবন ব্রত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি রামমনোহর লোহিয়া আর বাবাসাহেব আম্বেদকরের অনুগামী। তাঁদের জীবন আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। আমার পদবী যাতে জাতিভেদ সমস্যাকে উস্কে দিয়ে আর পাঁচজনকে বিড়ম্বনায় ফেলে, সেই কারণেই তা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।”
গত দু’মাস ধরে কৃষকদের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু, টিকরি সীমান্ত, দিল্লি-উত্তর প্রদেশের গাজিপুর সীমান্ত প্রভৃতি এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ডঃ সুনীলম। শুধু তাই নয়, কৃষকদের সঙ্গে নিজেও সামিল হয়েছেন অবস্থান বিক্ষোভে। মধ্যপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন শুরুর পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। গরীব কৃষকদের স্বার্থে উজ্জ্বল কেরিয়ারকে হেলায় দূরে সরিয়েছেন, কখনো অনুশোচনা হয় না? জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ডঃ সুনীলম জানান, “গরীবের জন্য লড়াই করার মানুষ এখন অনেক কম। যদি আমায় দেখে আরও কেউ এগিয়ে আসেন, সেটাই আমার সাম্মানিক।”