নয়াদিল্লি: শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে কোনও মূল্যে রাজনীতির আখড়া হতে দেওয়া যাবে না৷ নরেন্দ্র মোদী সরকার এটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না৷ সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে৷ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই হুঁশিয়ারি দিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল৷
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে ভাষা আন্দোলন সহ সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকাই যেখানে অগ্রগণ্য সেখানে ছাত্রদের কন্ঠরোধ করতেই এবার রীতিমত হুঁশিয়ারি দিলেন পোখরিয়াল৷ রবিবার তিনি বলেন যে, ব্যাক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এ থেকে দূরে রাখতে হবে কারণ বহু শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত থেকে পড়াশুনা করতে আসে৷
মোদি মন্ত্রিসভায় ছাড়পত্র পাওয়ার পর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করতে যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির ঠিক সেভাবেই জোরদার বিরোধিতা করে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি রাস্তায় নেমেছেন এদেশের ছাত্র সমাজ৷ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সারাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের জোয়ার যুব আন্দোলনকে চরম অশনি সংকেত বলে মনে করছেন দেশের শাসক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বরা৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশের মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাব রয়েছে, এই চিন্তাভাবনাই তুলে ধরতে চাইছেন দেশের জনগণের কাছে৷ তাই, দেশের সুষ্ঠু বিকাশের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশের প্রতি মূল্যবোধ তৈরি করার লক্ষ্যে এবার নতুন শিক্ষানীতিতে নতুন করে দেশের পাঠ পড়াতে চাইছে কেন্দ্র সরকার৷ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩৩ বছর পরে এবার যে নতুন শিক্ষানীতি আনা হবে তা ভারত কেন্দ্রিক হবে এবং দেশের মূল্যবোধের সাথে তা যুক্ত থাকবে৷ তিনি বলেন, জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং তদন্তের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিকরণ হবে৷
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এদিন রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পোখরিয়াল৷ দেশের শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বেদের বুলি আওড়েই কংগ্রেসের উদাহরণ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, দেশকে ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্ত করার জন্য দায়ী কংগ্রেস নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও এবিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য রটাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করার জন্য বিশেষভাবে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে পোখরিয়াল বলেন যে ২০০৫ সালে সাংসদ থাকাকালীন রাজ্যে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন টিএমসি সুপ্রিমো৷
সেইসময় তিনিই এই আইন আনার বিষয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন৷ তিনি পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতাকে সমর্থন জানিয়ে দাবি করেন যে এই দেশগুলি “ধর্মনিরপেক্ষ নয়”৷ পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমো এবং কংগ্রেসের কাছে প্রশ্ন তুলে ধরেন যে, দেশ ভাগের সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং খ্রিস্টান সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পাকিস্তানের জনসংখ্যার ২৩% বেশি ছিল, কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ রয়েছে৷ তারা ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের হত্যা করা হয়েছিল নাকি তারা পালাতে বাধ্য হয়েছিল?