লখনউ: সরিয়ে দেওয়া হল হাথরস কাণ্ডের মেডিক্যাল রিপোর্টের সঙ্গে যুক্ত থাকা দুই চিকিৎসককে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজের ডাঃ আজিম মালিক নামে এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যকে বলেছিলেন যে হাথরসের নির্যাতিতার ক্ষেত্রে এফএসএল রিপোর্টের কোন মূল্য নেই, তাঁকে মঙ্গলবার বলা হয় তিনি যেন আর তাঁর কাজে যোগ না দেন। এ ছাড়াও অপর চিকিৎসক ওবায়দ হককেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে একই কথা জানিয়েছে। ডাঃ হক মহিলার মেডিকো-লিগাল কেস রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন।
এফএসএল রিপোর্টের দোহাই দিয়ে উত্তরপ্রদেশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন যে ১৯ বছর বয়সী ওই দলিত মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়নি। অন্যদিকে ডাঃ মালিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন “মহিলার ধর্ষণের ১১ দিন পরে এফএসএলের নমুনাগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল। যদিও সরকারি নির্দেশে স্পষ্ট হলা হয়েছে যে ঘটনার ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ফরেনসিক প্রমাণ পাওয়া যাবে। তাই এই রিপোর্ট এই ঘটনায় ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে না।”
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের সিএমও ইনচার্জ ডাঃ এসএএইচ জাইদি দুই চিকিৎসক ডাঃ মালিক ও ডাঃ হককে চিঠি পাঠান। সেখানে বলা ছিল, “আপনাকে জানানো হচ্ছে যে ২০/১০/২০২০-এ সকাল ১১টা ২৪ মিনিটে টেলিফোনে উপাচার্য অধ্যাপক তারিক মনসুরের নির্দেশ দিয়েছেন যে জেএনএমসিএইচের মেডিকেল অফিসার, জরুরি ও ট্রমা পদে আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্টকে তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। অতএব, আপনাকে আর কোনও দায়িত্ব পালন করতে হবে না।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, “হাথরসের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও চিকিৎসককে প্রশাসন দায়িত্ব পালন থেকে স্থগিত করেনি। দু’মাস আগে হাসপাতালের সিএমওরা ছুটি নেওয়ায় শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানে জরুরি অবস্থা ছিল এবং তখনই ডাঃ মালিক ও ডাঃ হককে কেবল ‘ছুটির শূন্যপদ’ পূরণ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। এখন যেহেতু সিএমওরা ফিরে এসেছেন, তাই কোনও শূন্যপদ নেই। আর সেই কারণেই তাদের পরিষেবার প্রয়োজন নেই।”
এরপর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে, তাদের সিদ্ধান্তে চিকিৎসকরা সন্তুষ্ট নন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছে এবং যাতে তাঁদের হাসপাতালের অন্য কোথাও পাঠানো যায়, তার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক এবং এএমইউতে জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা শাফে কিদওয়াই বলেছেন, “সংবাদ মাধ্যমের কাছে হাথরাসের ঘটনা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য কোনও চিকিৎসককে বসিয়ে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। এই দুই চিকিৎসক ছুটির শূন্যপদে কাজ করেছলেন। তাঁদের মেয়াদ ৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা হাসপাতালে এসে কিছু মেডিকো-লিগাল মামলায় স্বাক্ষর করেছেন। তাই, সিএমও তাদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে বিশ্ববিদ্যালয় তা বিবেচনা করতে পারে।”
ডাঃ হক বলেছেন, “আমাকে শেষ আগস্টের বেতন দেওয়া হয়েছিল। আমাদের সিনিয়রদের শরীর ভাল না থাকায় আমরা দায়িত্বে ছিলাম। আমি মহামারী চলাকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। এখন ওরা আমাদের বারণ করেছে। কারণ ডাঃ মালিক মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাঁরা মনে করেন যে আমি তথ্য ফাঁস করেছি। কেন এখনও আমাকে নিশানা করা হচ্ছে তা আমি নিশ্চিত নই। তিন দিন আগে, আমি জানতে পারি যে আমার নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করা হবে। আমাদের এখনও এই বিষয়ে উপাচার্যের কাছ থেকে কোনও লিখিত বিবৃতি পাইনি।” ডাঃ মালিকেরও মত তাঁকে গত মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। তাঁকে সিনিয়রদের বকাও শুনতে হয়েছিল কারণ তিনি মিডিয়াকে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছিলেন।