‘সাবধান! বিষাক্ত গ্যাস’, হাড়হিম করা সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী তিন

‘সাবধান! বিষাক্ত গ্যাস’, হাড়হিম করা সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী তিন

নয়াদিল্লি: বছর খানেক আগে পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য তথা স্বামীকে কেড়েছে করোনা। স্বামীর মৃত্যুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই করোনার কবলে পড়ে হারাতে হয়েছে চলনশক্তি। এমতাবস্তায় মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে দিল্লির বসন্তবিহার এলাকার বসন্ত অ্যাপার্টমেন্ট সোসাইটির বাসিন্দা মঞ্জুর জীবন মৃত্যুর আগেই নরকে পরিণত হয়েছিল। আর সেই নরক যন্ত্রনার হাত থেকে বাঁচতেই হাড়হিম করা সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করলেন একই পরিবারের তিন সদস্য। শনিবার মঞ্জুর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁর এবং তাঁর দুই মেয়ে অংশিকা এবং অঙ্কুর মৃতদেহ। সেইসঙ্গে উদ্ধার হয়েছে অদ্ভুত একটি সুইসাইড নোট। মৃত্যুর আগে পুলিশের উদ্ধারকারী দলকে সতর্ক করতেই যেন ওই সুইসাইড নোট লিখেছিলেন তাঁরা। নোটটিতে লেখা রয়েছে, ‘সাবধান! ঘরে কোনও আগুন জ্বালাবেন না। নিঃশ্বাসও নেবেন না। বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে।’

দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় বছর খানেক ধরে ৫০ বছর বয়সী মঞ্জু শয্যাশায়ী। করোনার দাপটে এক লহমায় ছারখার হয়ে গিয়েছে তাঁর পরিবার। তখন থেকেই তাঁরা মানসিক অবসাদের শিকার বলে খবর। আর সেই অবসাদের কারণেই ঘরে রান্নার গ্যাস এবং কাঠ কয়লার ধোঁয়া একসঙ্গে জ্বালিয়ে জানলা, দরজা বন্ধ করে ঘরটিকে গ্যাস চেম্বারে পরিণত করে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা। শনিবার বসন্ত অ্যাপার্টমেন্টের ওই ফ্ল্যাটে যখন পুলিশ আধিকারিকরা পৌঁছান তখন দেখা যায় দরজা-জানালার চারপাশে ভালো করে প্লাস্টিক আটকানো হয়েছে যাতে একফোঁটাও বাইরের বাতাস ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে না পারে। এমতাবস্তায় এই বিষাক্ত গ্যাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ঢুকেই ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তিন মহিলা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান।

প্রতিবেশীদের  তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বছরখানেক ধরে ওই পরিবারের উপর দিয়ে যে ঝড়ঝাপটা গিয়েছে তাতে দিন দিন মুষড়ে পড়ছিল গোটা পরিবার। শেষের দিকে  তারা আর কারও সাথে কথা পর্যন্ত বলতেন না বলে দাবী। এমতাবস্থায় দিন কয়েক ধরে হঠাৎই প্রতিবেশীরা লক্ষ্য করেন যে ওই ফ্ল্যাটের দরজা কেউ খুলছে না। আশেপাশের লোকজন দু-একবার দরজা ধাক্কাও দেন। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ না পাওয়া যাওয়ায় শেষে বাধ্য হয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শনিবার পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঢুকে দেখেন এই ভয়ংকর ঘটনা।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘরের ভিতরে ঢুকেই দেখা যায় খাটের উপর পড়ে রয়েছে মঞ্জু দেবীর নিথর দেহ। তা ঠিক পাশেই একই ঘরে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর দুই মেয়ে অংশিকা এবং অঞ্কু। প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন। মৃতদেহগুলির কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *