বাংলাদেশের পর ভারত! সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলন যেদিকে মোড় নিতে পারে..

দিল্লি: বাংলাদেশের পর ভারত! সংরক্ষণ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন, ভারত বনধ।ভোটে বড়সড় এফেক্ট, তারপরেও রিস্ক নিচ্ছে মোদী সরকার?মোটেও সাধারণ নয়,সংরক্ষণ কিন্তু বড় রাজনৈতিক ইস্যু। এটাই কী…

দিল্লি: বাংলাদেশের পর ভারত! সংরক্ষণ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন, ভারত বনধ।ভোটে বড়সড় এফেক্ট, তারপরেও রিস্ক নিচ্ছে মোদী সরকার?মোটেও সাধারণ নয়,সংরক্ষণ কিন্তু বড় রাজনৈতিক ইস্যু।

এটাই কী তবে শুরুয়াত? ভীম আর্মি এবং অন্যান্য দলিত সংগঠনের ডাকে বুধবার ছিল ‘ভারত বন্‌ধ’। আর ১৪ ঘন্টার সেই বনধেই বিরাট এফেক্ট বিহারে। রাস্তায় মিছিল লক্ষ্য করে চললো পুলিশের লাঠিচার্জ। বনধের মিশ্র প্রভাব উত্তর এর রাজ্যগুলোতেও। বেসিক্যালি

তফসিলি জাতি এবং জনজাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে সাম্প্রতিক নির্দেশ তারই প্রতিবাদে এই আন্দোলন দেশের দলিত এবং আদিবাসীদের। সেই নির্দেশে কী বলা হয়েছে? তফসিলি জাতি এবং জনজাতি সমাজের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তাঁদের সংরক্ষণ বাতিল করা হোক। পরিবর্তে এই সংশ্লিষ্ট সমাজের আর্থিক সারিতে যারা একদম পেছনে রয়েছেন সে অতি পিছিয়ে পড়া অংশকে চিহ্নিত করে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হোক। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, দেশের শীর্ষ আদালতকে এই রায় প্রত্যাহার করতে হবে। আদিবাসী জাতি ও উপজাতি সংরক্ষণে তাঁরা হাত দিতে দেবেননা। আর এই দাবি দাওয়া পূরণের জন্য আন্দোলনের রুপরেখা ঠিক কিভাবে সাজানো হয়েছে, বা আগামীদিনে সেটা কিভাবে এক্সিকিউট হবে সেটা এখনো পরিষ্কার না হলেও। এদিনের বনধের ছবি দেখে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন ধরে নেওয়া যায় এটাই ভারতে সংরক্ষণ রক্ষা আন্দোলনের টিজার।
সেক্ষেত্রে উঠে আসা স্বাভাবিক, পদ্মাপাড়ের প্রসঙ্গ। দুদিন আগেই বাংলাদেশের বুকে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যা ঘটে গেছে তার সাক্ষী খোদ ভারত। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আন্দোলনের মুখে পড়ে। আশ্রয় নিয়েছেন ভারতেই। আর এরই মধ্যে ভারতে সংরক্ষণ নিয়ে অলরেডি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়ে গেছে। কিন্তু এই আন্দোলন এর জল কতদূর গড়াবে? বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সংরক্ষণ এমন একটা বিষয়, যা আশির দশকের শেষ দিক থেকে ভারতের রাজনীতিকে রীতিমতো বদলে দিয়েছিল, এমনকি এই বিষয়টা এখনও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রাজনৈতিক ইস্যু। এটা তো ফ্যাক্ট, রাজনীতির সঙ্গে সংরক্ষণের সম্পর্ক প্রাক-স্বাধীনতার যুগ থেকে। আর আধুনিক সময়ে ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই একটা বড় ইস্যু হিসাবে থেকেছে এটা। নাহলে সাধেই কী অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন কমে যাওয়ার পেছনেও ছিল তপশীলি জাতি-উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ বা কোটা তুলে দেওয়া হতে পারে, এরকম একটি আশঙ্কা। অথচ, এরপরেও বিষয়টা যখন ভারত বনধ, লাঠিচার্জ, এমনকি কিছু জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধের দিকে মোড় নিল তখন ভারতে মোদী সরকারের উপর যে চাপ বাড়ছে সেটা নতুন করে বলে বোঝানোর দরকার পড়ছে না। এদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, চন্দ্রশেখর আজাদের ভীম সেনা-সহ একাধিক দল এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছে। গোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিজেপি ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছে।

কারণ, এনএসিডিএওআর এর দাবি গুলো মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। লিস্টে রয়েছে সুপ্রিম রায় প্রত্যাখ্যান করুক কেন্দ্রীয় সরকার, সরকারি ও বেসরকারি শূন্যপদ পূরণ করা হোক,
শুধু কেন্দ্রই নয় রাজ্য সরকারও তা করুক,
ন্যায়বিচার এবং সমতা রক্ষা করা হোক, নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক, সুপ্রিম রায় অনগ্রসর শ্রেণির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে এবং অবিলম্বে জাত-ভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করা হোক। বিশেষ করে চাপ বাড়ার কারণ, সম্প্রতি এই কোটা আন্দোলন থেকেই গণ অভ্যুথ্থানের ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশে। তারপরই রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে। ওই দেশেও আন্দোলনের শুরুতে দাবি ছিল একাধিক, কিন্তু শেষে সব দাবি একজায়গায় এসে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তাই সংরক্ষণ রক্ষার দাবিতে ভারত বনধ, বিহারে থমকে ট্রেন, বন্ধ জাতীয় সড়ক, স্কুল কলেজৈর ছবি যখন ঘুরছে সংবাদ মাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তখন বারেবারে ফিরছে বাংলাদেশের স্মৃতি।

মনে করিয়ে দিই, ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসে রাজনৈতিক ছোঁয়া বা বিতর্ক দুটোরই আঁচ লেগেছে সংরক্ষণ ব্যবস্থার উপরে। কিন্তু এবার কী ঘটবে? প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে।