প্রযুক্তি হাতিয়ে নকল পণ্যের আঁতুর ঘর চিন, ক্ষতিগ্রস্ত ভারত ও বিশ্ব অর্থনীতি

প্রযুক্তি হাতিয়ে নকল পণ্যের আঁতুর ঘর চিন, ক্ষতিগ্রস্ত ভারত ও বিশ্ব অর্থনীতি

নয়াদিল্লি:  নকল করার প্রসঙ্গ উঠলে, সবার আগে উঠে আসবে চিনের নাম৷ নকল করার মাস্টারমাইন্ড হল চিন৷ নকল করার এই দক্ষতাই এখন তাদের সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে৷  

প্রথমেই আসা যাক প্রতিরক্ষার কথায়৷ যে কোনও দেশের সেনাবাহিনীর শক্তিশালী হওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ যেমন ফ্রান্স থেকে আসা রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে৷ চিন এবং পাকিস্তানের জন্য রাফাল বড় চ্যালেঞ্জ৷ কারণ এই দুই দেশের হাতে এই ধরনের যুদ্ধবিমান নেই৷ কিন্তু চিন এবং পাকিস্তানের মতো দেশ তাদের বায়ুসেনার শক্তি বাড়াচ্ছে অন্যান্য দেশের নকল করে৷ চিনের জে-১১ ফাইটারজেট আসলে রাশিয়ার সুখোই এসইউ-২৭ এর নকল৷ আবার জেন্দু জে-১০ যুদ্ধবিমানটিও তৈরি করা হয়েছে আমেরিকায় এফ-১৬ ফাইটার জেটের আদলে৷ অথচ চিন এগুলি তাদের নিজস্ব বলেই দাবি করে আসছে৷ 

আরও পড়ুন- কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে চর্ম সংস্থাগুলি, কাজ হারিয়ে বেকার ৭৫ হাজার শ্রমিক

ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুযায়ী, এই ধরনের কারবারকে অপরাধ মূলক উদ্যোগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ প্রতি  বছর সারা বিশ্বে ১২৭ লাখ কোটি টাকারও বেশি নকল দ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে৷ যা কানাডা, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার অর্থ ব্যবস্থার চেয়েও বেশি৷ আশ্চর্যজনকভাবে, সারা বিশ্বে যে নকল পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, তার ৮০ শতাংশই তৈরি হয় চিনে৷ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই নকল পণ্যের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশই বিক্রি করা হয় আমেরিকার মতো দেশে৷ অর্থাৎ যে দেশের তৈরি পণ্যের নকল করা হচ্ছে, সেদেশেই এই সকল নকল পণ্য বেচে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে বেজিং৷ কফি থেকে শুরু করে গাড়ি, প্রতিটি জিনিসের নকল দ্রব্য তৈরি করে ফেলতে পারে চিন৷ 

আরও পড়ুন-  ভারতে করোনা-টিকার বণ্টন কীভাবে? জানাল সিরাম ইনস্টিটিউট

১৯৮৫ সাল পর্যন্ত চিনে মোট গাড়ির সংখ্যা ছিল মাত্র ৫,২০০৷ তখন চিনের অধিকাংশ মানুষেরই নিজস্ব গাড়ি ছিল না৷ চিনের কমিউনিস্ট সংস্কৃতি অনুযায়ী, সেখানে নিজস্ব গাড়ি রাখার অনুমতি দেওয়া হত না৷ আথচ আজকে চিনে গাড়ির সংখ্যা ২৭ কোটিরও বেশি৷ যা গোটা ইউরোপে উপস্থিত গাড়ির সংখ্যার চেয়েও বেশি৷ দুনিয়ার তাবড় তাবড় সংস্থা চিনে গাড়ি নির্মাণ করছে৷ কিন্তু নির্লজ্জভাবে এই সকল সংস্থাগুলির গাড়ির নকশা ও প্রযুক্তি চুরি করে নকল গাড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে চিন৷ এমনই কিছু গাড়ির উদাহরণ দেখলে আপনারাও চমকে উঠবেন৷ 

আরও পড়ুন-  সেদিন নিজে ভেঙেছিলেন স্কুল, আজ সেই স্কুল-বাড়ি নির্মাণে হাত লাগলেন প্রাক্তন মাওবাদী

কয়েক দশক আগেও ভারতের বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল মারুতি ৮০০৷ এই গাড়িকেই ভারতের প্রথম ‘ফ্যামিলি কার’ বলা হত৷ ভারতে এখন আর এই গাড়ির উৎপাদন হয় না৷ কিন্তু চিনে এর নকল প্রতিমূর্তি আজও বেশ জনপ্রিয়৷ চুটিয়ে বিক্রিও হচ্ছে৷ চিনে মারুতি ৮০০-কে জিয়াঙ্গনান টিটি নাম দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে৷ এর ইঞ্জিনও মারুতির মতো ৮০০ সিসির৷ বাকি ফিচারগুলও হুবহু এক৷  ভারতে বিক্রি হওয়া আরও একটি বিখ্যাত গাড়ি হল টয়োটা কোম্পানির ইনোভা৷ ভারতে এই গাড়ির দাম প্রায় ২৫ লাখ থেকে শুরু৷ কিন্তু চিনে ইনোভার নকল লিনম্যাক্স বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাড়ে সাত লাখ টাকায়৷ 

আরও পড়ুন- মাস্ক পরেনি, তাই গ্রেফতার ছাগল! থানায় তুলে নিয়ে গেল যোগীর পুলিশ

একইভাবে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের একটি জনপ্রিয় গাড়ি রেঞ্জ রোভার ইভোকের হুবহু নকল রয়েছে চিনে৷ যার নাম দেওয়া হয়েছে ল্যান্ড উইন্ড এক্স৭৷ রেঞ্জ রোভারের দাম যেখানে ৫৫ লাখ টাকা, সেখানে চিনে এর নকল মিলবে মাত্র ১৫ লাখ টাকায়৷ প্রসঙ্গত, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারকে এখন ভারতীয় সংস্থা হিসাবেই গণ্য করা হয়৷ এই সংস্থাটি কিনে নিয়েছে টাটা মোটরস৷ আরও একটি বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা হল অডি৷ এই সংস্থার একটি মডেল অডি আর৮-এর নকল চিনে সিএইচ লিথিয়া নামে বিক্রি হচ্ছে৷  আসল অডির দাম শুরু ৮ কোটি থেকে৷ কিন্তু চিনে অনেক সস্তায় এই গাড়ির নকল মিলবে৷ এমন ভাবেই নকল করা হচ্ছে রোলস রয়েস ফ্যান্টমের৷ ভারতে ৯ কোটি টাকার এই গাড়ি চিনে গিলি জিবি নামে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩২ লাখে৷ 

আরও পড়ুন- ইদের উৎসবে লকডাউন ছাড়? বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে লকডাউন! আজ ফয়সালা

শুধু নকল গাড়ি নয়৷ নাম করা ব্র্যান্ডের নকল জামাকাপড়, ঘড়ি, ফোন এমনকী জুতোও বানাচ্ছে চিন৷ এই নকল পণ্য সারা বিশ্বের অর্থব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকারক৷ নকল পণ্যের জন্য প্রতি বছর আমেরিকায় ১৪ লাখ কোটি টাকার আথিক ক্ষতি হয়৷ ভারতের ক্যানড ফুড আইটেমেরও নকল করছে চিন৷ যার প্রভাব পড়ছে ভারতের একাধিক বড় বড় ব্র্যান্ডের উপর৷ এফআইসিসিআই-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, নকল পণ্যের জন্য প্রতি বছর ৬ হাজার কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে দেশে৷ 

আরও পড়ুন- মোদীর দরবারে নালিশ মমতার! নমোকে প্রশংসা করে ধনকরকে নিশানা

কিন্তু কী ভাবে এই কাজ করে চিন? এর জন্য মূলত তিনটি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়৷প্রথমত, কোনও পণ্যের সাল্পাই চেনে প্রবেশ করে চিন৷ তারপর আসল পণ্যগুলি চুরি করে সস্তা দামে অবৈধভাবে সেগুলি বিক্রি করে তারা৷   দ্বিতীয়ত পদ্ধতি হল, আসল পণ্যের নকল তৈরি করে নেওয়া৷ যেহেতু বিশ্বের অধিকাংশ পণ্যই চিনে তৈরি হয়, তাই পণ্যগুলি প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাদের হাতে থাকে৷ নকল যন্ত্র লাগিয়ে কম দামে গাড়ি তৈরি করে তা বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তৃতীয়ত, যে কোনও বড় আন্তর্জাতিক পণ্যের নকল করা৷ যাদের নামও কাছাকাছি রাখা হয়৷ যাতে সহজেই গ্রাহকদের বোকা বানানো যায়৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 5 =