চ্যালেঞ্জই মূল মন্ত্র! অরুণাচল-চিন সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় ক্যাপ্টেন সারিয়া

চ্যালেঞ্জই মূল মন্ত্র! অরুণাচল-চিন সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় ক্যাপ্টেন সারিয়া

নয়াদিল্লি:  লাদাখ সীমান্ত পেরিয়ে এখন উত্তজনার আঁচ অরুণাচলে৷ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে ড্রাগনের রক্ত চক্ষু৷ তবে চিনা আস্ফালন রুখতে বুক চিতিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় সেনা৷ সেই অরুণাচল সীমান্তেই আকাশ রক্ষার ভার এখন আকাশবাণী গোরক্ষপুরের প্রোগ্রাম হেড তেহসিন আব্বাসির মেয়ে সারিয়া আব্বাসির মজবুত কাঁধে৷   

আরও পড়ুন- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভরাডুবি ভারতের, হামলার শিকার কাশ্মীরি পড়ুয়ারা

সারিয়ার বাবা গোরক্ষপুর আকাশবানীর কর্তা৷ তাঁর মা রেহানা ভাটহাট জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষিকা৷  ছোট ভাই তামসিল আহমেদ দিল্লিতে বিবিএ-র ছাত্র৷ সারিয়া ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী৷ আইএমএস গাজিয়াবাদ থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক পাশ করার পর তেনসিন আব্বাসির বড় মেয়ে সারিয়ার হাতে তখন স্থায়ী চাকরি৷ অফার আসছিল বিদেশ থেকেও। কিন্তু তাঁকে ডাক দিচ্ছিল অন্য আবেগ৷ মধ্যবিত্ত নিস্তরঙ্গ জীবনে নিশ্চিন্ত চাকরির সুখ তাঁকে বেঁধে রাখতে পারেনি৷ কারণ চোখ বুজলেই ভেসে উঠত জলপাই পোশাক৷ বুকে লাগালো তারা আর মেডেলের সারি৷ আরামের চাকরি ভুলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন সারিয়া৷ যোগ দিয়েছেন সেনা বাহিনীতে৷ 

চ্যালেঞ্জ ছিল কঠিন৷ কারণ এখনও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মেয়েদের আসন সীমিত৷ হালে মিলেছে ফিল্ড পোস্টিংয়ের অনুমতি৷ ২০১৫ সালে সারিয়া যখন  কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেসের ফর্ম জমা দিচ্ছেন, তখনও তাঁর বাবা-মায়ের মনে অনিশ্চয়তার মেঘ৷ কারণ আসন মাত্র ১২৷ প্রথমবার সফল হতে পারেননি ঠিকই৷ কিন্তু দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই তিনি সফল৷ ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মায়ের জন্মদিনে লেফটেন্যান্ট হন আকাশবানী কর্তার মেয়ে৷ তিনি এখন ক্যাপ্টেন। অরুণাচল সীমান্তে অতি-গুরুত্বপূর্ণ তাওয়াং সেক্টরে মোতায়েন আর্মি এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের ট্রুপ কম্যান্ডার তিনি। সর্বোপরী সারিয়ার ইউনিটই দেশের প্রথম এএডি রেজিমেন্ট, যাদের হাতে রয়েছে আধুনিক অবতারে ফেরা এল-৭০ বিমানবিধ্বংসী বন্দুক।

সারিয়ার ছেলেবেলা কেটেছে সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত আত্মীয়দের বীর গাথা শুনে৷ ছোট থেকেই তার মনেও তৈরি হয়েছিল সেই জেদ, সেই দুর্নিবার সাহস৷ আজ যখন স্বপ্ন সত্যে হয়েছে তাঁর, তখন তিনি বুঝতে পারছেন এই উর্দি আর ব্যাজের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কতখানি পরিশ্রম৷ 

গত বছর জুন মাসে রক্ত ঝরেছে লাদাখ সীমান্তে৷ এর পর থেকে  অরুণাচল সীমান্তেও বাড়তে শুরু করে চিনা সেনার উপস্থিতি৷ সেনাবাহিনীর ব়্যাডারে সেই প্রমাণও মিলেছে৷ সীমান্ত পেরিয়ে অরুণাচলে তৈরি হয়েছে আস্ত গ্রাম৷  এই গ্রামের আড়ালেই বাড়ছে লাল ফৌজের সামরিক ঘাঁটি। যে কোনও সময় সীমান্ত টপকে অরুণাচলের আকাশে ঢুকে পড়তে পারে চালকহীন সশস্ত্র বিমান বা কপ্টার৷ সেই অযাচিত আক্রমণ রুখতে সারিয়াদের হাতে অস্ত্র এল-৭০৷ এ ছাড়াও অরুণাচলের অন্যান্য সীমান্তে মোতায়ের করা হয়েছে বফর্স কামান ও এম-৭৭৭ আল্ট্রালাইট হাউইৎজ়ার কামান- যার পাল্লা ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =