নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতার মুখে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যতই একরোখা মনোভাব পোষণ করুন, এই মুহূর্তে ভারত সরকারের একাধিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যে তীব্র বিরোধিতার বিষয় হয়ে উঠেছে এবার তারই প্রতিফলন প্রকাশ্যে আসতে চলেছে। গণতন্ত্রের পরিপন্থী সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এবার রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব পাঠাতে চলেছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের একটি বড় অংশ। পার্লামেন্টের ৭৫১ সদস্যের মধ্যে ৬০০ জন নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়ে কমপক্ষে ৬টি ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন রাষ্ট্রপুঞ্জে।
জানা গিয়েছে, মার্চে ব্রাসেলসে ইন্দো-ইউরোপিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগদানের আগেই, আগামী ২৯ জানুয়ারি ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্ল্যানারি অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট খসড়া প্রস্তাবগুলি আলোচনার জন্য পেশ করা হবে এবং ৩০ জানুয়ারি তার উপর ভোটাভুটি হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি লঙ্ঘন, দেশজুড়ে সিএএ বিরোধীর উপরে পুলিশের গুলি চালনা, গ্রেফতারি নিগ্রহ এবং এনআরসি-এর দ্বারা “বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রহীনতার সমস্যা” তৈরি করার অভিযোগে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সরব ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক প্রগতিশীল জোট ও ডেমোক্র্যাটসদের একাংশের মতে বৈধ নাগরিক ও শরণার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পিপলস পার্টির মতে সিএএ এবং এর বিস্তৃত নেতিবাচক পরিণতির প্রভাব পড়তে পারে আন্তর্জাতিক ভারতের চিত্র ও আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর।
প্রশাসনিক সূত্র জানা গিয়েছে, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য সিএএ-এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে খসড়া প্রস্তাব আনতে চাইছেন। কিন্তু একাংশের মতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা ছাড়া, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই আইন পাশ করাতে সংসদের দুই কক্ষেই বিতর্ক হয়েছে।’
প্ল্যানারি অধিবেশনের প্রকাশিত নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, শুরুতে ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তথা ইউনিয়নের বিদেশনীতি ও নিরাপত্তা দফতরের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক জোসেফ বোরেল ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সম্পর্কে বিবৃতি পাঠ করবেন।
এর আগেও, জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে গতবছর সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলোচনায় বসেছিল ইউনিয়ন, তবে সেবার কোনো ভোটাভুটি হয়নি। এরপর অক্টোবর মাসে দিল্লি ও শ্রীনগর সফরে আসেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২২ জন সাংসদ। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করলেও কার্যক্ষেত্রে এই সফর ইউনিয়নকে বিশেষ প্রভাবিত করতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। যদিও ভারত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের আপত্তির বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ বিদেশ মন্ত্রক।