কোর্টের নির্দেশে মায়ের কাছে থাকবে সে, শুনেই বাবাকে জড়িয়ে কান্না খুদের, জ্ঞান হারাল পিতা

কোর্টের নির্দেশে মায়ের কাছে থাকবে সে, শুনেই বাবাকে জড়িয়ে কান্না খুদের, জ্ঞান হারাল পিতা

জয়পুর:  প্রতিদিন আদালত চত্বরে কত রকম ঘটনার সাক্ষী থাকে মানুষ৷ কখনও বিচ্ছেদের যন্ত্রণা, কখনও আবার হারানো কিছু ফিরে পাওয়ার সুখ, কখনও অপরাধের শাস্তি, আরও না জানি কত রকমের ঘটনাপ্রবাহ৷ তবে এমন আবেগঘন দৃশ্য বিরল৷ ছোট্ট সন্তানের সঙ্গে বিচ্ছেদে আকুল বাবা সংজ্ঞা হারালেন কোর্ট চত্বরেই৷  বাবাকে হারিয়ে ছটফট করল একরত্তি ছেলে।

আরও পড়ুন- নদী প্রায় ভরছে মৃতদেহে! আরও করুণ অবস্থা ধস কবলিত মণিপুরের

আদালত চত্বরে বাবার গলা জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে চলেছে সে৷ ছেলেকে বুকে জড়িয়ে সমানে কেঁদে চলেছে বাবাও৷ বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ছ’বছরের খুদে বার বার বলছিল, ‘‘আমাকে বাবার কাছ থেকে আলাদা কোরো না। আমি বাবার কাছেই থাকতে চাই।’’ কিন্তু তার কথা কেউ শুনল না৷  বরং  জোড় করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল পুলিশ। 

ছোট্ট ছেলেটি যত বেশি করে টেনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল ততই যেন বাবাকে জাপটে ধরছিল সে৷ বলছিল, ‘‘বাবার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে যেয়ো না।’’ আদালত চত্বরে খুদের এই কাতর আর্তি দেখে অনেকেরই চোখে জল চলে আসে৷ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন উপস্থিত মানুষ। এই হৃদয়বিদারক  দৃশ্যটি রাজস্থানের ঝুনঝুনুর চিড়াওয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের।

২০১৫ সালে হরিয়ানার ঝজ্জরের বাসিন্দা প্রীত পঞ্চরঙ্গিয়ার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন রাজস্থানের সুরজগঢ়ের বাসিন্দা সুমন৷ পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে একটি পুত্রসন্তান হয় তাঁদের। ছেলের নাম দেন যতীন। প্রীত সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন৷ স্ত্রী সুমন গৃহবধূ। কর্মসূত্রে প্রীত বাইরে থাকায় ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন সুমন।

তবে প্রীত এবং সুমনের মধ্যে সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৮ সালে। দাম্পত্য অশান্তি মেটাতে পঞ্চায়েতের সভাও ডাকা হয়। সেই সময় মীমাংসা করে দু’জনেই একসঙ্গে থাকার জন্য রাজি হয়ে যান। বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন সুমন৷ ২০১৯-এ তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়। আদর করে মেয়ের নাম দেন জিয়া। কিন্তু, মেয়ে হওয়ার পর ফের মেয়ে দু’জনের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে থাকে৷ সম্পর্কে তিক্ততা এতটাই বেড়ে যায় যে মাস কয়েক আগে  শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে সুরজগঢ় থানায় পণের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন সুমন। এর পর মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফের বাপের বাড়ি চলে যান তিনি৷ যতীনকে রেখে যান প্রীতের কাছে৷ 

বাপের বাড়িতে যাওয়ার পর ছেলেকে হেফাজতে চেয়ে আরও একটি মামলা করেন সুমন৷  গত সোমবার সেই মামলার শুনানির সময় দুই সন্তানকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়েছিলেন প্রীত এবং সুমন। শুনানির পর আদালত সুমনের পক্ষেই রায় দেয়৷ ছেলেকে মায়ের হেফাজতে রাখারই নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু আদালতের এই নির্দেশ শুনে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে যতীন৷ চোখের জল আটকাতে পারেননি প্রীতও৷ এর পর বাবা আর ছেলের সেই আবেগঘন দৃশ্যের সাক্ষী থাকে ঝুনঝুনুর চিড়াওয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত৷ ছেলেকে হারিয়ে আদালত চত্বরেও জ্ঞান হারান প্রীত৷

যতীনকে দেখাশোনা করবেন বলেই সম্প্রতি সেনা থেকে অবসরও নিয়েছিলেন প্রীত৷  লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে গলওয়ান ঘাঁটিতে তিনি কর্মরত ছিলেন৷ কিন্তু, ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে পারলেন না৷