কংগ্রেসের ‘হাতে’ ৩, বিজেপি’র ১২, কোন সমীকরণে লোকসভা ভোট?

কংগ্রেসের ‘হাতে’ ৩, বিজেপি’র ১২, কোন সমীকরণে লোকসভা ভোট?

নয়াদিল্লি: সেমিফাইনালে চারে তিন বিজেপি৷ কংগ্রেসের ‘হাতে’ এক৷ অন্যদিন থেকে দেখলে গোবলয়ে কংগ্রেস শূন্য৷ আর দক্ষিণে শূন্য বিজেপি৷ 

ভারতীয় রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে হিন্দ বলয়৷ ভারতীয় রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হল- ‘উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লি তার৷’ একদা উত্তরপ্রদেশে দাপট ছিল কংগ্রেসের৷ শুধু উত্তরপ্রদেশেই নয়, গোটা গোবলয়ের উপর ভর করেই দিল্লিতে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল৷ সেই পথে হেঁটেই দিল্লি জয় করেছে তুলনায় ‘নবীন’ বিজেপিও৷ লোকসভা ভোটের আগে চার রাজ্যের ফলে বাড়তি অক্সিজেন পেল গেরুয়া দল৷ রাজনীতির কারবারিদের মতে, দিল্লির পথ প্রশস্থ গেরুয়া শিবিরের সামনে৷ সেখানে অনেকটাই কন্টকপূর্ণ বিরোধীদের পথ৷ 

এদিকে, কমতে কমতে মাত্র তিনে এসে ঠেকেছে কংগ্রেস৷ গত বছর  হিমাচল প্রদেশে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস৷ হিমাচল গোবলয়ের মধ্যে না পড়লেও এই রাজ্য মূলত হিন্দিভাষীদেরই বাস৷ সদ্য সমাপ্ত চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে একমাত্র তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস৷ ১১৯ আসনের এই দক্ষিণী রাজ্যে ম্যাজিক ফিগার ৬০৷ সেখানে কংগ্রেস একক ভাবে পেয়েছে ৬৫৷ এছাড়াও কংগ্রেসের সরকার রয়েছে আরও এক দক্ষিণী রাজ্য কর্ণটকে৷ অন্যদিকে, ভারতের ২৮ রাজ্যের মধ্যে ১২টিরই রং গেরুয়া৷ কংগ্রেসের হাত থেকে ছত্তিসগঢ় এবং রাজস্থানও ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি৷ সেখানে কাল হয়েছে কংগ্রেসের অন্তর্কলহ৷ এছাড়াও মহারাষ্ট্র, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং মেঘালয়েও জোট সরকারে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ রবিবারের জয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৫৪৩ আসনের লোকসভায় প্রায় অর্ধেকটাই বিজেপি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)-র সরকার রয়েছে দিল্লি এবং পাঞ্জাবে৷ তারাই এখন তৃতীয় বৃহত্তম জাতীয় দল৷ 

লোকসভার রণক্ষেত্রে নামার আগে বেশ দুর্বল অবস্থান ১৩৭ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দলের৷ গোবলয়ে আসন টলমলে৷ দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ৪০৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে রয়েছে মাত্র দুই! ৯০ আসনের হরিয়ানায় কংগ্রেসের ‘হাতে’ ৩০। হিন্দি-ভারতে কোনঠাসা কংগ্রেসের লোকসভার আসন কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৫০-এ গিয়ে৷ সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদাও হারিয়েছে হাত শিবির৷

কংগ্রেসকে বাঁচিয়ে রেখেছে দক্ষিণ৷ অবস্থা খুব ভালো না হলেও, অক্সিজেন এসেছে দক্ষিণ গোলার্ধ থেকেই৷ এদিকে বিজেপি’র হ্যাট্রিকের পর  দলের সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘সবসময়ই বলেছি যে আমরা হার্টল্যান্ড স্টেট জিতব।” এটা আমাদের কঠোর পরিশ্রম, রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং তৃণমূল স্তরে পৌঁছে কাজ করার ফল৷ 

বর্তমানে ভারতের যে রাজনৈতিক অবস্থান, সেখান থেকে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কংগ্রেস৷ ‘ইন্ডিয়া’ জোটেই বা তাদের গুরুত্ব কতখানি থাকবে? এতদিন আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে যে ‘দাদাগিরি’ দেখিয়েছে কংগ্রেস, সেই ‘দাদাগিরি’ আর থাকবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য নাম না করেই কংগ্রেসকে ভুল শুধরে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল নিয়ে অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “পরাজিতেরা ভুল শুধরে নিন। হাতে সময় খুবই কম। তাই সময় অপচয় না করে সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করুন।”
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *