কী কারণে এনসিপি ভাঙাল বিজেপি? আদৌ কী সমস্যায় পড়ল মহারাষ্ট্রের বিরোধী জোট?

কী কারণে এনসিপি ভাঙাল বিজেপি? আদৌ কী সমস্যায় পড়ল মহারাষ্ট্রের বিরোধী জোট?

মুম্বই: ফের খবরের শিরোনামে মারাঠা ভূম! এনসিপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা অজিত পাওয়ার দলের নয় জন বিধায়ককে নিয়ে মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিন্ডে সরকারে যোগ দিয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, অজিতের দাবি তাঁর সঙ্গে দলের প্রায় চল্লিশ জন বিধায়ক রয়েছেন। আগামী দিনে এনসিপি’র প্রতীক ঘড়িচিহ্ন ব্যবহার করার অধিকার তাঁরই থাকবে, এমনটাই দাবি করছেন অজিত। যদিও আগামী দিনে বিষয়টি কোন আকার নেবে, ফের তা আদালতে গড়াবে কিনা, ইত্যাদি বিষয়ের উপর যথারীতি নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোন লক্ষ্যে বিজেপিকে এমন ভূমিকায় দেখা গেল? সেই সঙ্গে প্রশ্ন, এতে সত্যিই কি লাভ হবে বিজেপি ও তার সঙ্গীদের? রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন এই পদক্ষেপে গেরুয়া শিবিরের তেমন কোনও লাভ হবে না। উল্টে সমস্যা বাড়তে পারে।

মহারাষ্ট্রে লোকসভার আসন সংখ্যা ৪৮। গত নির্বাচনে শিবসেনাকে সঙ্গী করে বিজেপি জোট পায় ৪১টি আসন। কিন্তু শিবসেনা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় সেই সুবিধা এবার আর পাবে না বিজেপি। একনাথ শিন্ডে বিজেপির সমর্থনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হলেও বাস্তব ঘটনা হচ্ছে নীচুতলায় উদ্ধব ঠাকরের অংশের শিবসেনায় সেভাবে ভাঙন ধরেনি। বলা যায় মোটের উপর অটুট আছে উদ্ধবের সংগঠন। সবচেয়ে বড় কথা শিন্ডের সঙ্গী হয়ে শিবসেনার যে সমস্ত বিধায়ক ও সাংসদ বিজেপি শিবিরের দিকে গিয়েছেন, তাঁরাও স্বস্তিতে নেই। অনেকেই উদ্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরতে চাইছেন বলে জল্পনা। কারণ অনেককেই বড় পদ বা মন্ত্রিত্বের লোভ দেখানো হলেও কিছুই জোটেনি তাঁদের। তাই লোকসভার দিকে তাকিয়ে শক্তি বাড়াতেই বিজেপি এনসিপি’কে ভাঙিয়েছে। এটাই প্রধান কারণ।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এতে কী বিজেপির আদৌ লাভ হল? সমস্যায় পড়ল বিরোধী জোট? আসলে আপাত দৃষ্টিতে অজিতের ‘পাওয়ার পলিটিক্স’-এ বিজেপির লাভ হয়েছে বলে মনে হলেও বাস্তবটা কিন্তু আলাদা। কারণ অজিত পাওয়ারের সঙ্গে এনসিপি’র সিংহভাগ বিধায়ক যদি মহারাষ্ট্র সরকারে সামিল হন,  তাহলে সামনের বছর সেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা প্রত্যেকেই টিকিটের প্রত্যাশী হবেন এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে সেই সমস্ত আসনে বঞ্চিত হবেন বিজেপি ও শিন্ডে গোষ্ঠীর বহু টিকিট প্রত্যাশী। বিধানসভার পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটবে। যা তীব্র সমস্যায় ফেলবে বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। এক একটি কেন্দ্রে অযথা বিক্ষুব্ধ তৈরি হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি।

সেক্ষেত্রে তাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে ভোট কেটে কংগ্রেস ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা গোষ্ঠীর সুবিধা করে দেবেন। যা কয়েক মাস আগেই দেখা গিয়েছে হিমাচল প্রদেশে। সেখানে বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধ ভোট কেটে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপিকে। উল্টোদিকে সুবিধা হবে কংগ্রেস ও উদ্ধবের। যদি সত্যিই অজিত পাওয়ারের দাবি মতো এনসিপি’র মুলস্রোত বিজেপি-শিন্ডে  সরকারের দিকে চলে যায়, তাহলে উদ্ধব ও কংগ্রেস নেতৃত্ব নিশ্চিন্তভাবে ২৮৮টি বিধানসভা আসনে আসন ভাগাভাগি করে প্রার্থী দিতে পারবেন। কারণ বিজেপি বিরোধী যে ‘মহা বিকাশ আঘারি’ গঠিত হয়েছে সেখানে আগের পরিস্থিতি বজায় থাকলে এনসিপিকেও সমান অনুপাতে আসন ছাড়তে হতো। তাতে উদ্ধব ঠাকরের গোষ্ঠী ও কংগ্রেসের আসন কমে যেত। এখন সেটা হবে না। উল্লেখ্য গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং অবিভক্ত শিবসেনা জোট বেঁধে লড়াই করে। সেখানে পাল্টা জোট বেঁধেছিল কংগ্রেস এবং এনসিপি। এই দুটি দল ১২৫টি করে আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। বাকি ৩৮ টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল নির্দল এবং ছোট দলগুলিকে। তাই গতবারের চেয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নিশ্চিত ভাবে অনেক বেশি আসনে লড়বে।

এখানেই শেষ নয়, আরও একটি ফ্যাক্টর তৈরি হবে যা নিশ্চিত ভাবে অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে যাবে। সেটি হল সংখ্যালঘু ভোট। এনসিপি’র ইডিওলজি হল ধর্মনিরপেক্ষতা। স্বাভাবিকভাবেই শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি এতদিন রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু বিজেপি জোটে যাওয়ার ফলে অজিত পাওয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা সেই সমর্থন হারাবেন। তাই আগামী দিনে মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে অজিত পাওয়ার কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর সেই সূত্রে অজিতের এই পদক্ষেপে বিজেপির লাভ হল সেটা কিন্তু একেবারেই বলা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 3 =