ফটোগ্রাফির ছাত্র থেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, একনজরে উদ্ধব ঠাকরের রাজনৈতিক সফর

ফটোগ্রাফির ছাত্র থেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, একনজরে উদ্ধব ঠাকরের রাজনৈতিক সফর

68f73f251384320c4bb35b2b82721965

মুম্বই:  ফটোগ্রাফির ছাত্র থেকে মহারাষ্ট্রের মসনদ৷ দীর্ঘ এই সফরে বহু চড়াই-উতরাই এসেছে৷ এক সময় বাবার প্রতিপত্তির ছায়ায় কোথায় যেন হারিয়েই গিয়েছিল তাঁর অস্তিত্ব৷ কিন্তু, ২০১৯ সালে শিবাজি পার্কে মারাঠি ভাষায় শপথবাক্য পাঠ করে মহারাষ্ট্রের ইতিহাসে শিবসেনার উত্থানের নতুন কাহিনি শুরু করেন বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরে৷ রাজ্য শাসনের গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন শিবসেনা সুপ্রিমো৷ 

আরও পড়ুন- মোদীর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

১৯৬০ সালে মুম্বইয়ে জন্ম উদ্ধবের৷  মুম্বইয়েই বেড়ে ওঠা তাঁর। বালমোহন বিদ্যামন্দির থেকে স্কুলের পাঠ শেষ করে জেজে স্কুল অব আর্টস থেকে স্নাতক৷ কলেজে তাঁর পড়ার বিষয় ছিল ফটোগ্রাফি৷ তিনি এতটাই ফটোগ্রাফি ভালবাসতেন যে রাজনীতির দুনিয়ায় আসার আগে বিভিন্ন পত্রিকায় ফটোগ্রাফির কাজও করেছেন৷ মুম্বইয়ে একাধিক চিত্র প্রদর্শনীও করেছেন উদ্ধব। সেই সময় রাজনীতির সঙ্গে কোনও সম্পর্কই ছিল না তাঁর। কিন্তু, মুম্বইয়ে তখন বালাসাহেবের দাপট। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে ছিলেন মহারাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা৷ সেই সময় বাল ঠাকরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন উদ্ধবের তুতো ভাই রাজ ঠাকরে। বলা ভালো, শিবসেনা সুপ্রিমোর ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন তিনি৷ দূর দূরান্তে ছিল না উদ্ধবের ছায়া৷

২০০৩ সালে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে আনকোড়া উদ্ধবকে বসানো হয় শিবসেনার ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট পদে৷ বালাসাহেবের নির্দেশেই অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল৷ সেখান থেকেই শুরু উদ্ধবের রাজনীতির সফর৷ এই দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের মত যত না ছিল, তার চেয়ে অনেক বড় ছিল বাবার সিদ্ধান্ত৷ বাবার ছত্রছায়াতেই রাজনীতির জমিতে ভিত শক্ত করছিলেন উদ্ধব। মারাঠা ভূমিতে বাড়ছিল তাঁর শক্তি৷ শিবসেনার বরাবরের ইস্যু কৃষক সমস্যা সমাধানের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি৷ বাবার নির্দেশেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সমস্যা জানতে থাকেন৷ কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় সরব হয়ে উঠেছিলেন৷ কষ্টিপাথরে ঘষে বাড়ছিল তাঁর চমক৷ 

২০১২ সালে বালাসাহেবের মৃত্যুর পর উদ্ধব ঠাকরেকে শিবসেনার সুপ্রিমো রূপে নির্বাচিত করা হয়৷ এই সিদ্ধান্তেই রাজ ঠাকরের সঙ্গে মনমালিন্য চরমে ওঠে তাঁর। রাগে-অভিমানে ‘মাতশ্রী’ ছাড়েন রাজ৷ তৈরি করেন নিজের রাজনৈতিক দল ‘মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা’। 

ভাইয়ের এই পদক্ষেপে ধাক্কা খেয়েছিলেন উদ্ধব৷ কিন্তু, থেমে যাননি৷ বরং ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছেন। এমনকী বিজেপির প্রভাব খর্ব করার মতো শক্তি অর্জন করে ফেলেন বালাসাহেব-পুত্র৷ সেই সঙ্গে তৈরি করতে থাকেন পরবর্তী প্রজন্ম। কিন্তু একটা আক্ষেপ থেকেই গিয়েছিল৷ মহারাষ্ট্রে শিবসেনার দাপট বাড়লেও কোনও দিনও মুখ্যমন্ত্রী পায়নি দল৷ বরং কংগ্রেস, এনসিপি থেকেই বারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে মহারাষ্ট্রে। বালাসাহেব যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি সেই স্বপ্ন পূরণ করেন উদ্ধব।

মহারাষ্ট্রের মসনদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন শিবসেনা সুপ্রিমো। সেই কারণেই আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও বিজেপি’র সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেস-এনসিপিকে জোটসঙ্গী করেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন উদ্ধব৷ মারাঠা রাজনীতির ইতিহাসে সেদিন প্রথম বালাসাহেবের ছায়ার বাইরে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন৷ যদিও সময় আর রাজনীতির চোরা স্রোতে অস্তমিত শিবসেনার সাম্রাজ্য৷ একনাথ শিন্ডের বিদ্রোহে আস্থাভোটের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় মহাবিকাশ আগাড়ী জোটকে৷ তবে সেই অগ্নিপরীক্ষা দেননি উদ্ধব৷ তার আগেই ইস্তফা ঘোষণা করেন৷