বিয়ের আসরে শিশুদের হাত সাফাই! ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ চক্রের পর্দাফাঁস

বিয়ের আসরে শিশুদের হাত সাফাই! ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ চক্রের পর্দাফাঁস

নয়াদিল্লি: বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন সাধারণ বিয়েবাড়ি৷ আর পাঁচটা বিয়েবাড়ি যেমন হয় আর কি! চারিদিকে সাজ-সাজ রব, খাওয়া-দাওয়া, মন্ডা-মিঠাইয়ের রকমারি, গান-বাজনা৷ সে এক এলাহি ব্যাপার। কিন্তু একবার সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে ঢুকলেই পকেট গড়ের মাঠ! টাকা-পয়সা, মোবাইল, গয়নাগাঁটি সবই যায় ‘চোর’দের কল্যাণে। সবশেষে পেটপুরে খেয়েদেয়ে ‘চুরির মাল’ গুছিয়ে নিয়ে দে চম্পট। এদিকে বর-কনের পরিবারের কর্তারাও হতভম্ব। এমনই বেশকয়েকটি ঘটনায় জেরবার দিল্লি ও তার সংলগ্ন এলাকার মানুষ৷

বেশ কিছুদিন ধরে পরপর অনেকগুলি বিয়েবাড়ি সাফাইয়ের অভিযোগ পেয়ে টনক নড়ে পুলিশের৷ তৈরি হয় বিশেষ দল৷ অনুষ্ঠানের জায়গাগুলির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়৷ তদন্তে নেমে হতবাক বনে যান পুলিশের আধিকারিকরা‌৷ জানা যায়, চোরেরা সবাই শিশু৷ কারও বয়স ৮, কারও ১০। এদের আবার পুরোদস্তুর গ্যাং রয়েছে। পেশাদারি নাম ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’। সদস্যরা সকলেই মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার অন্তর্গত এক গ্রামের বাসিন্দা৷

২ ডিসেম্বর দিল্লি থেকে নিজেদের গ্রামে ফেরার পথে পুলিশ এই জালিয়াতি চক্রের মোট সাতজনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ৪ লক্ষ টাকা, প্রচুর গয়নাগাঁটি এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন। সন্তকুমার, হংসরাজ, কিষান, সন্দীপ ও বিশাল নামের পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় এরাই নাকি গোটা গ্যাংয়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। এদের সঙ্গেই ছিল দুই নাবালক। দিল্লি পুলিশের অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার শিবেশ সিং জানিয়েছেন, এই ৫ জন গ্রাম থেকে বাচ্চা ছেলেদের শহরে নিয়ে আসত। বাচ্চাদের পরিবার পরিবর্তে পেত ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। শহরে নিয়ে এসে এদের ‘চুরিবিদ্যা’র পাঠ পড়ানো হত৷

তিনি আরও জানিয়েছেন, বাচ্চাদের শেখানো হত কীভাবে দামি জামা-কাপড় পড়ে বিয়েবাড়ির নামীদামী অতিথিদের ভীড়ে মিশে যেতে হবে। কীভাবে মিষ্টি কথা আর হাসিখুশি ব্যবহারে সকলের বিশ্বাস জিতে নিতে হবে। তারপর কীভাবে সুযোগ বুঝে অতিথিদের গয়নাগাঁটি, মোবাইল, টাকার ব্যাগ, উপহার হাত সাফাই করতে হবে, তাও পইপই করে শেখানো হত‌। তারপর খাওয়াদাওয়া সেরে জিনিসপত্র গুটিয়ে ভাগলবা। যতক্ষণে অতিথিরা নিজেদের সর্বস্ব হারানোর ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন, তখন আর ‘চোর’ কোথায়? ওই তল্লাটে তখন তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর এই গোটা কাজটাই করত খুদের দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 10 =