মিডিয়ার রক্ত চুষছে গুগল-ফেসবুক, রুখেছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া! ভারত কি সক্ষম?

মিডিয়ার রক্ত চুষছে গুগল-ফেসবুক, রুখেছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া! ভারত কি সক্ষম?

নয়াদিল্লি:  কোভিড-১৯ পেন্ডামিকের কালো ছায়ার তলায় সংবাদমাধ্যম৷ করোনার দাপটে অর্থিকভাবে বিপর্যস্ত তামাম দুনিয়া৷ ভাটার টানে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বিশ্বের সংবাদ সংস্থাগুলিও৷ খবর সংগ্রহ, ঘটনা তদন্ত এবং সংবাদ পরিবেশনে যে ব্যায় হয়, সেই তুলনায় আয় কমে গিয়েছে বহুগুণ৷ কোনও কোনও মিডিয়া হাউস সংবাদদাতার সংখ্যা কামাতে বাধ্য হচ্ছে৷ ফলে খবরের সংখ্যা কমছে৷ কিন্তু এই অবস্থায় আরও বেশি করে সত্য ঘটনা জানতে চাইছে প্রতিটি দেশের মানুষ৷

এদিকে, গুগল এবং ফেসবুক বিভিন্ন মিডিয়া হাউস থেকে খবর নিয়ে তাঁদের প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে কয়েকশো কোটি টাকা উপার্জন করছে৷ কিন্তু খবর সংগ্রহ বা খবর সম্পাদনার জন্য কোনও অর্থ ব্যায় করতে হচ্ছে না তাদের৷  ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের সিংহভাগ আয় নিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক গুগলের মতো তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি৷ অন্যদিকে, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করেও গণমাধ্যমের আয় অনেক কম। করোনা সংক্রমণের জেরে মিডিয়া হাউসগুলির আয় বহুলাংশে কমে গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকে বাঁচাতে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ উচিত করা উচিত৷ এরই মধ্যে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করেছে স্পেন এবং ফ্রান্স৷ এবার সেই পথে পা বাড়াল অস্ট্রেলিয়া৷ মিডিয়া হাউসগুলির প্রকাশিত খবর দেখানোর বিনিময়ে টেক জায়েন্ট গুগল এবং ফেসবুককে অর্থ দিতে হবে বলে জানাল সে দেশের সরকার৷

গুগল এবং ফেসবুক তাদের প্ল্যাটফর্মে টপ নিউজগুলি তুলে ধরে বছর ভর ডিজিটাল ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে৷ অন্যের তৈরি করা খবর দেখিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছে তারা৷ কিন্তু এবার মিডিয়া হাউজের কোনও কনটেন্ট ব্যবহারের জন্য ফেসবুক অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে বলে সাফ জানাল অস্ট্রেলিয়া৷ অস্ট্রেলিয়ার কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজুমার কমিশন (এসিসিসি) এই বিষয়ে একটি আচরণবিধিও তৈরি করছে৷

দেখা যাচ্ছে, অনলাইন বিজ্ঞাপনের বিশাল আয় নিয়ে যাচ্ছে গুগল এবং ফেসবুক। যদিও তাদের কনটেন্টের বেশির ভাগই তৈরি করছে মিডিয়া সংস্থাগুলি। এসিসিসির তৈরি নিয়নমীতিতে শাস্তির বিধানও থাকছে। এতে কোন কোন কনটেন্ট ‍যুক্ত করা যাবে, সেই বিষয়েও স্পষ্ট উল্লেখ করা হবে৷

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বের অন্য দেশের মতোই করোনা পেন্ডামিকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় জুলাই মাস নাগাদ গুগল ও ফেসবুকের জন্য নির্দেশিকা জারি করা হবে৷ তবে অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তে নাখুশ ফেসবুক। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ফ্রান্স৷ সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে গুগল এবং ফেসবুককে নিউজ কনটেন্টের জন্য প্রকাশকদের অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ দেশের মিডিয়া হাউসগুলেকে বাঁচাতে একই পদক্ষেপ করেছে স্পেন৷

এই বিষয়ে এখনও কোনও মতামত জানায়নি ভারত৷ তবে এই কঠিন পরিস্থিতিতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না সরকার৷ অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশের সংবাদমাধ্যম৷ সংবাদমাধ্যকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়৷ এই স্তম্ভই এখন ক্ষতিগ্রস্ত৷ তাই ইন্টারনেট জায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করার সময় এসে গিয়েছে৷ ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারত সরকারের এমন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া উচিত যেখানে মুনাফার লভ্যাংশ পাবে সংবাদসংস্থাগুলিও৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − fifteen =