বানভাসি অসম, কাদামাখা পথ পায়ে হেঁটে পরিদর্শন, IAS কীর্তিকে কুর্নিশ নেটিজেনদের

বানভাসি অসম, কাদামাখা পথ পায়ে হেঁটে পরিদর্শন, IAS কীর্তিকে কুর্নিশ নেটিজেনদের

গুযাহাটি: সঞ্জীব খিরওয়ার এবং কীর্তি জাল্লি। তাঁরা দু’জনেই আইএএস অফিসার৷ কিন্তু উচ্চপদস্থ দুই আমলার জগত যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। একজন শিরোনামে এসেছেন, স্টেডিয়াম খালি করে পোষ্য সারমেয়কে হাঁটানোর জন্য৷ অন্যজন নজর কেড়েছেন বন্যা বিধ্বস্ত অসমের কাছাড়ে কাদামাখা পায়ে হেঁটে দুর্গতদের অবস্থা পরিদর্শন করে৷ এক হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে কীর্তির এই লড়াই মন জিতেছে হাজার হাজার মানুষের। 

আরও পড়ুন- দুই রাজ্য চিন্তা বাড়ল দেশের, কোভিড গ্রাফে বড় হেরফের

বন্যা বিধ্বস্ত অসমের কাছারে ঘর ছাড়া হাজার হাজার মানুষ৷ তাঁদের ঠাঁই হয়েছে অস্থায়ী শিবিরে৷ ক্ষিদের জ্বালার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার ভিটে হারানোর যন্ত্রণা৷ অসহায় মানুষগুলোর এই যন্ত্রণা দেখে নিজেকে আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আটকে রাখতে পারেননি আইএএস অফিসার কীর্তি জাল্লি৷ মাঠে নেমেছেন তিনি৷ দাঁড়িয়েছেন বন্যা দুর্গত মানুষগুলোর পাশে৷ তাঁর সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়েছে৷ সেখানে দেখা গিয়েছে, কাদামাখা পায়ে এক মহিলার সঙ্গে একটি নৌকার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন আইএএস অফিসার কীর্তি। তাঁদের দু’জনেরই মুখেই স্মিত হাসি। তাঁর সেই ছবি মন জয় করেছে নেটিজেনদের৷

প্রবল বৃষ্টিতে অসমের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়৷ কীর্তির এলাকাও বানভাসী৷ এই অবস্থায় নিজে পায়ে হেঁটে গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন এই আইএএস অফিসার৷ তাঁকে পাশে পেয়ে হাসি ফুটেছে মানুষগুলোর মুখেও৷ কিন্তু, কে এই কীর্তি জাল্লি? 

১৯৮৯ সালে জন্ম কীর্তির৷ তিনি দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দি জেলার প্রথম মহিলা ডেপুটি কমিশনার৷ ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত প্রচারের জন্য অতি পরিচিত এই আইএএস অফিসার৷ পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও প্রচারাভিযানে সদর্থক ভূমিকা পালন করে এসেছেন কীর্তি৷ 

কাজের প্রতি নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রমের জন্য পরিচিত এই আইএএস অফিসার একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন৷ ২০২০ সালে অসমের প্রত্যন্ত জেলাগুলির উন্নয়নে তাঁর উদ্যোগের জন্য কীর্তিকে সেরা প্রশাসনিক পারফর্মার হিসাবে স্বীকৃতি এনে দেয়৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় জাল্লির এই ‘কীর্তি’ শেয়ার করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে৷ 

জেলা প্রশাসকের কথায়, কীর্তি বাস্তব সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখতেই নিজে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দেখেন৷ যাতে জেলা প্রশাসন এবং সরকার এই সমস্যা মোকাবিলায় আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে৷ স্থানীয়রা বলছেন, এই প্রথম তাঁদের মাঝে এসে তাঁদের কথা শুনলেন কোনও ডেপুটি কমিশনার৷ আইএস অফিসারকে সমস্যার কথা জানাতে পেরে স্বস্তিতে তাঁরাও৷

সম্প্রতি আরও এক আইএএস অফিসার ও তাঁর আমলা স্ত্রীর কাণ্ড ভইরাল হয়েছিলেন৷ নিজেদের ‘কুকীর্তি’র জন্য শিরোনামে এসেছিলেন দিল্লির সদ্য প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সঞ্জীব খিরওয়ার ও তাঁর আমলা স্ত্রী রিঙ্কু দুগ্গার। অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরেই দিল্লির ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে ক্রীড়াবিদ ও প্রশিক্ষকদের সন্ধে ৭টার মধ্যে স্টেডিয়াম খালি করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। কারণ সন্ধে ৭টার পর পোষ্য সারমেয়কে নিয়ে হাঁটতে যাবেন সস্ত্রীক সঞ্জীব। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতে, বৃহস্পতিবার রাতে সঞ্জীবকে লাদাখ ও তাঁ স্ত্রী রিঙ্কুকে অরুণাচলে বদলি করে দেওয়া হয়। সেই বিতর্কের মাঝেই জ্বলজ্বল করছে কীর্তির কর্তব্য৷ তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা দেশের মানুষ৷