নয়াদিল্লি: ভারতের মৃতপ্রায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৩৩ কোটিরও বেশি জনগণের সামনে এই মুহূর্তে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ নিশ্চিন্তে দুবেলা দুমুঠো অন্ন সংস্থান৷সেখানে পুষ্টি,স্বাস্থ্য আর স্বাস্থ্য সচেতনতা কল্পনা মাত্র৷ তবে যাদের নিশ্চিন্তে অন্ন সংস্থানের উপায় আছে, সচেতনতার অভাব, অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস,ভেজাল খাবারের মত কারণে তাদের সমস্যাও একই মাত্রায় শোচনীয়৷ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ইসমর), পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া (ফিফি) এন্ড ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (নিন). তথ্য বলছে ভারতের মত উন্নত দেশেও ৫ বছরের নীচে ৬৯ শতাংশ শিশু অপুষ্টিজনিত রোগের শিকার৷ বিশেষত শহরাঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবেশ ও পরিবার পরিচালিত অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসের কারনেই এই সমস্যা৷
ন্যাশনাল নিউট্রিশন মিশন ২০২২-এর ২০১৭সাল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য অনুসারে ভারতে প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে ২ জনের মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি৷ দেশের প্রতিটি রাজ্যের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর হার প্রতি ৫ টি শিশুর মৃত্যুর অনুপাতে ৬৮.২ শতাংশ(৭০৬,০০০)৷ সব বয়সের শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যহানিও একটা প্রধান চিন্তার বিষয়৷ ন্যাশনাল নিউট্রিশন মিশন ২০২২-এর রাজ্যভিত্তিক তথ্য অনুসারে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওজনে কম সদ্যজাতদের প্রবণতা ছিল ২১.৪ শতাংশ, ৩৯.৩ শতাংশ শিশুদের সঠিক বৃদ্ধির অভাব ছিল, গর্ভপাতের হার ছিল ১৫.৭ শতাংশ, নষ্ট করে, ওজনে কম শিশু ছিশ ৩২.৩ শতাংশ, শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতা ছিল ৫৯.৭ শতাংশ, ১৫ বছর বয়সী কিশোরী থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতা ছিল ৫৪.৪ শতাংশ, পর্যাপ্ত স্তন্যদান ৫৩.৩ শতাংশ এবং অতিরিক্ত ওজনের শিশু ছিল ১১.৫ শতাংশ৷
ন্যাশনাল নিউট্রিশন মিশন ২০২২-এর ২০১৭ সাল পর্যন্ত সমীক্ষাযর সূচক অনুসারে এই ধারা বজায় থাকলে২০২২ পর্যন্ত ওজনে কম সদ্যজাতদের সংখ্যা বাড়বে ৮.৯ শতাংশ, বয়স অনুপাতে শিশুদের কম বৃদ্ধির হার বাড়বে ৯.৬ শতাংশ, শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার বাড়বে ১১.৭ শতাংশ, মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার বাড়বে ১৩.৮ শতাংশ৷
সমীক্ষা বলছে দেশের সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ সহ বিহার, আসাম এবং রাজস্থানে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে অক্ষমতা নিয়ে জীবনযাপন করছে সবথেকে বেশী সংখ্যক মানুষ৷ মা ও শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যার ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে নবজাতকের শ্বাসযন্ত্র ও পেটের সংক্রমণ সহ সামগ্রিক ভাবে পুরো স্বাস্থ্যের ওপর৷
তথ্য অনুসারে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯০-এ যা প্রতি ১ লাখে ২৩৩৬ জন ছিল৷ ২০১৭- তে সেই সংখ্যা ৮০১ জনে দাঁড়িয়েছে৷ যদিও এতে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ঝুঁকি থেকেই গেছে৷ বয়সের দিক থেকে অন্যান্য রোগের তুলনায় অপুষ্টিজনিত রোগে অক্ষমতার হার মাত্র ২ শতাংশ কমেছে৷ বয়স অনুপাতে সঠিক বৃদ্ধি এবং কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩৯ থেকে কমে ৩৩ শতাংশ হয়েছে৷ তবে ২০১০-১৭ এই সাত বছরে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ৷ ২০১৭ পর্যন্ত দেশের ৬০ শতাংশ শিশু এবং ৫৪ শতাংশ মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার দেখা গেছে৷
অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যেই অতিরিক্ত ওজনের শিশুদের সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে৷ এক্ষেত্রে দেশের অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধানে গৃহীত একাধিক প্রকল্প যেমন ১৯৭৫-এর শিশু বিকাশ প্রকল্প, ১৯৯৫-এর মিড ডে মিল প্রকল্প, ২০১৩-র খাদ্য সুরক্ষা আইন, সব ক্ষেত্রেই নীতি নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ভারতের অর্ধেক শিশুই অপুষ্টির শিকার৷ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে এবছরের ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সে’ বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারতের ঠাঁই হইয়াছে ১০২তম স্থানে৷ যা লজ্জাজনকভাবে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেরও পরে৷ ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান সবার নীচে৷ এই পরিসংখ্যানকে অস্বীকার করার কোনও উপায় আছে কি? সুতরাং, ২০০০ সালের তুলনায় ভারতের অবস্থা অনেকটাই ভাল বলে, শাসকপক্ষ মান বাঁচানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলাই যায়৷