নয়াদিল্লি: বিতর্কিত কৃষি বিলকে কেন্দ্র করে রবিবার থেকে তপ্ত হয়ে উঠেছে সংসদ৷ সরকার বনাম বিরোধীদের লড়াইয়ে তোলপাড় ভারতীয় গণতন্ত্রণের পীঠস্থান৷ রবিবার বিতর্কের জের মঙ্গলবারও অব্যাহত৷ সপ্তমে সংঘাত৷ বিতর্কিত কৃষি বিলের ৩টি দাবি না মেটা পর্যন্ত রাজ্যসভার অধিবেশন বয়কট করেছেন বিরোধী সাংসদরা৷ রাজ্যসভার অধিবেশন বয়কট ঘোষণার পর এবার লোকসভাতেও এককাট্টা বিরোধী শিবির৷ রাজ্যসভার সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে লোকসভার অধিবেশন বয়কটেরও ঘোষণা করা হয়েছে৷ ফলে, বুধবার বিরোধীদের হাজারি ছাড়ায় বসবে সংসদের অধিবেশন৷
আজ বিরোধীদের তরফে অধিবেশন বয়কটের জেরে রাজ্যসভা ফাঁকা থাকলেও সংসদের নিম্নকক্ষে ছিল বিরোধীদের হই-হট্টগোল৷ দু’দফায় অধিবেশন মুলতবি করে দেওয়া হয়৷ পরে বিকেলে লোকসভার অধিবেশন শুরু হতেই হই-হট্টগোল জুড়েদেন বিরোধীরা৷ অধীর চৌধুরী সাফ জানিয়ে দেন, রাজ্যসভা ও লোকসভা যমজ ভাই৷ রাজ্যসভায় যা হয়েছে, লোকসভায় তার প্রভাব পড়বে৷ রাজ্যসভার বিষয় লোকসভায় আলোচনা করার ক্ষেত্রে আপত্তি জানান স্পিকার৷ বিরোধীদের তরফে মুহূর্তেই অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ লোকসভায় থেকে কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে চলে বয়কট কর্মসূচি৷ কৃষি বিল নিয়ে কেন্দ্রকে আরও কীভাবে প্যাঁচে ফেলা যায়, তা নিশ্চিত করতে বুধবার বিরোধীরা বৈঠকে বসছে বলে খবর৷
রবিবার ধ্বনি ভোটে কৃষি বিল পাশ হওয়ার পরই তুমুল বিক্ষোভ শুরু করে বিরোধীরা৷ শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আট সাংসদকে সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু। মঙ্গলবার গুলাম নবি আজাদের আহ্বানে ধর্না তুলে রাজ্যসভার অধিবেশন বয়কটে সামিল হলেন সাসপেন্ড হওয়া আট সাংসদ৷
বাইরে ধর্নার মাঝেই মঙ্গলবার জিরো আওয়ারে বক্তব্য রাখার সময় তিন দফা দাবি তোলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা গুলাম নবি আজাদ৷ এই দাবি পূরণ করা না হলে, বিরোধীরা অধিবেশন বয়কট করবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি৷ তাঁর তিন দাবি হল- প্রথমত রাজ্যসভার আটজন সাংসদের উপর থেকে সাসপেনশনের নির্দেশ তুলে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র কম দামে যাতে বেসরকারি কোনও সংস্থা খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে না-পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে একটি বিল আনতে হবে৷ এবং তৃতীয়ত, এমএস স্বামীনাথন কমিটির প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে এমএসপি নির্ধারণ করতে হবে৷ পাশাপাশি সাসপেন্ড হওয়া আট সাংসদকে ধর্না তুলে বয়কটে শামিল হওয়ার আর্জিও জানান আজাদ।
এদিকে এদিন সকালে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের জন্য ধর্নাস্থলে চা নিয়ে যান রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং। কিন্তু তাঁর চায়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন আন্দোলনরত সাংসদরা৷ এমনকী হরিবংশ ‘লোকদেখানো’ পদক্ষেপ করছেন বলেও কটাক্ষ করেন তাঁরা৷ তবে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই সংসদে যাঁরা তাঁকে অপনাম-হেনস্থা করেছিলেন, আজ ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের চায়ের প্রস্তাব দিয়ে হরিবংশজি এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে উনি কতটা বিনয়ী ও বড় মনের মানুষ৷’’