সরকারি প্রকল্পের অজুহাতে বাস্তুচ্যুত ৬ লক্ষ মানুষ, ২০ হাজার লকডাউনে: রিপোর্ট

 হাউজিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্ক (এইচএলআরএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সম্ভবত কারফিউ-এর মতো শর্তের সুযোগ নিতেই লকডাউনের সময় এই উচ্ছেদের বেশিরভাগ কার্যকর করা হয়েছিল, যখন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা নিষিদ্ধ ছিল এবং তাদের আইনি প্রতিকারের সুযোগও ছিল না।”

নয়াদিল্লি:  করোনা সংক্রমণের জেরে দেশজুড়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যখন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য,শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অন্নসংস্থান পর্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তখন মাথার ছাদটুকুও হারাতে হচ্ছে বহু পরিবারকে। এক্ষেত্রে বিশেষত দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের দুর্দশা দৃষ্টান্তমূলক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্তৃপক্ষের অমানবিক, উদাসীনতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্রই প্রকাশ্যে এসেছে।এই সংকটজনক পরিস্থিতিতেও সরকারি প্রকল্পের আওতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। 

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে ভারতে কুড়ি হাজারেরও বেশি বাসিন্দাদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।  হাউজিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্ক (এইচএলআরএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ২৫ শে মার্চ (দেশব্যাপী লকডাউন চাপানো হয়েছিল) থেকে ৩১ শে জুলাইয়ের মধ্যে এইধরণের ৪৫ টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে করোনা ও লকডাউনের বিধিনিষেধের সুযোগ নিয়ে বিনা নোটিশে বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করেছে স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ। উল্লেখযোগ্যভাবে এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন একটি নির্দিষ্ট বর্গের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির বাসিন্দারা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সম্ভবত কারফিউ-এর মতো শর্তের সুযোগ নিতেই লকডাউনের সময় এই উচ্ছেদের বেশিরভাগ কার্যকর করা হয়েছিল, যখন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা নিষিদ্ধ ছিল এবং তাদের আইনি প্রতিকারের সুযোগও ছিল না।” উদাহরণ হিসেবে, তেলঙ্গানার সিদ্দীপেটে, আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই এপ্রিলের মাঝরাতে ৩০ টি পরিবারকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। বেশিরভাগ পরিবারই দলিত সম্প্রদায়ের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কথায়,আদালত আগেই জানিয়েছিল যে তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ অমাণ্য করেই বর্তমান পরিস্থির (সিভিডি -১৯) সুযোগ নিয়েছে এবং বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে মাঝরাতে রীতিমত ধ্বংসলীলা চালিয়েছে।

এইচএলআরএন রিপোর্টে মণিপুর, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, এবং জম্মু ও কাশ্মীর সহ সারা দেশে এই জাতীয় বেশ কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে প্রভাবিত হওয়া বেশিরভাগ বাসিন্দারাই দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে “মহামারী ও লকডাউনের ফলে উদ্ভূত সমস্যায় ভারতবর্ষের  শহর ও গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবিকা নির্বাহ, আয় এবং খাদ্যের সংস্থান সম্পর্কিত সমস্যাগুলির অমানবিকভাবে সুযোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সতর্কতা, নিয়মবিধির পরোয়া না করে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে পরিবারগুলিকে বাড়ি থেকে উৎখাত করে দেওয়ার মত ঘটনা তাদের দুর্দশা ও দারিদ্র আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত তিন বছরে (২০১৭-২০১৯)  আশ্চর্যজনকভাবে এইধরণের জোর করে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৫,৬৮,০০০টি। রিপোর্টে নথিভুক্ত প্রায় সমস্ত ঘটনাগুলির ক্ষেত্রেই এর জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ডগুলি অনুসরণ করেনি স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ।এইচএলআরএন পরিসংখ্যান অনুযায়ী  এইধরণের লক্ষাধিক উচ্ছেদের ঘটনাগুলির মধ্যে গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে ৫০,০০০টি এবং শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই ৯৯,৯৯৯টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উচ্ছেদের ঘটনাগুলির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শহরের সৌন্দর্যায়ন এবং বস্তি উচ্ছেদ  প্রকল্প হিসেবে। পরিকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে উচ্ছেদের ফলে বাস্তুহারা হয়েছেন ২৭% বাসিন্দা। আরও জানতে দেখুন এই – https://thewire.in/rights/eviction-covid-19-lockdown-hlrn-report লিঙ্ক দেখুন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − eighteen =