নয়াদিল্লি: দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে বুধবার দুপুরে ভারতের মাটি ছুঁল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রাফাল৷ এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করে পাঁচটি রাফাল জেট৷
চার বছর আগে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাফাল চুক্তি হয়েছিল ভারতের৷ এই রাফাল চুক্তি নিয়ে বহু জলঘোলা হয়েছে৷ এদিন অবশেষে ফ্রান্স থেকে ভারতে এসে পৌঁছয় প্রথম দফার পাঁচটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রাফাল৷ সীমান্তে ভারত-চিন উত্তেজনার মধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে এসে পৌঁছল এই গেম চেঞ্জার’ মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্টস। এর ফলে ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি বহুগুণ বেড়ে গেল৷
রাফাল যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কি?
এটি হল জোড়া ইঞ্জিনযুক্ত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান৷ একই সময়ে একসঙ্গে একাধিক কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে রাফালের৷ এই যুদ্ধবিমান বায়ু থেকে বায়ু মেটেরো মিসাইল, মিকা মাল্টিমিশন মিসাইল এবং স্ক্যাল্প ডিপ-স্ট্রাইক ক্রুজ মিসাইল বহনে সক্ষম৷ এটি বহু দূর থেকে রায়ু থেকে মাটিতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম৷
কোথা থেকে আনা হল এই যুদ্ধবিমান?
রাফাল যুদ্ধবিমানটি তৈরি করেছে ফরাসি এভিয়েশন সংস্থা দাঁসো৷ সোমবার বরডেক্সের কাছে ফ্রান্সের মেরিগনাক এয়ারবেস থেকে রওনা দেয় পাঁচটি রাফাল ফাইটার জেট৷ বুধবার দুপুরে আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে এসে পৌঁছয় এই যুদ্ধবিমান৷ এগুলির কোনওটি একটা আসন বিশিষ্ট আবার কোনওটি দুটি আসন বিশিষ্ট ফাইটার জেট৷ ফ্রান্স থেকে রওনা দেওয়ার পর প্রায় ১০ ঘণ্টা উড়ান দিয়ে রাফাল জেটগুলি অবতরণ করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। সেখান থেকে রওনা দেয় হরিয়ানার আম্বালার উদ্দেশে৷ মোট ৭ হাজার মাইল পথ পেরিয়ে ফ্রান্স থেকে ভারতে এসে পৌঁছেছে লড়াকু বিমান রাফাল৷
বাকি রাফাল যুদ্ধবিমানগুলি কবে আসবে ভারতের হাতে?
জানা গিয়েছে, দাঁসো টানা ন’মাস পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর আরও পাঁচটি রাফাল ভারতের হাতে তুলে দেবে৷ বাকি ২৬টি রাফাল জেট দেওয়া হবে ২০২১-এর শেষে৷ সোমবার ফরাসি বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে পাঁচটি রাফালের যাত্রা শুরুর সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত জাওয়েদ আসরাফ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাইলটরা জানিয়েছেন, এগুলি অত্যন্ত দ্রুতগামী, বহুমুখী এবং মারাত্মক যুদ্ধবিমান৷ এদের একত্রে বলা যেতেই পারে বিউটি অ্যান্ড দা বেস্ট৷’’
কোথায় যোগ দেবে এই লড়াকু যুদ্ধবিমান?
ভারতীয় বায়ুসেনা বাহিনীর ‘গোল্ডেন অ্যারো’ স্কোয়াড্রনে যুক্ত হবে অত্যাধুনিক রাফাল জেট৷ ২০১৬ সালে ভারতীয় বায়ুসেনা থেকে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান সরানোর পর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল গোল্ডেন অ্যারো স্কোয়াড্রন৷ কার্গিল যুদ্ধ সহ একাধিক অভিযানে সামিল হয়েছিল এই স্কোয়াড্রন৷
রাফাল চুক্তি কেলেঙ্কারি কি?
ভারতীয় বায়ুসেনা জানিয়েছিল, মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট হিসাবে তাদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে রাফাল এবং ইউরোফাইটার টাইকুনের৷ পরের বছর রাফালকেই বেছে নেয় বায়ুসেনা৷ তার আগে ২০০৭ সালে ইউপিএ সরকারের আমলেই ফ্রান্সের দাসোঁ এভিয়েশনের কাছ থেকে ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় আসার পর দাসোঁর সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয় ভারতের। সেই সময় ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের বরাত দেওয়া হয়৷ এর জন্য ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মোদী সরকারের এই চুক্তি নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় হওয়া চুক্তি অনুযায়ী বিমান পিছু ৫৭০ কোটি টাকা দাম ধার্য হয়েছিল৷ কিন্তু নয়া চুক্তি করার পর বিমান পিছু দাম পড়ছে ১,৬৭০ কোটি টাকা৷ যা নিয়ে বিরোধীদের অক্রমণের মুখে পড়ে মোদী সরকার।