মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে কী বললেন নমো?

মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে কী বললেন নমো?

নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস ও লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিনের বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নমো৷ তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ হতে চলল দেশেজুড়ে শুরু হয়েছে আনলক ওয়ান৷ এই সময়ে মানুষের উপলবদ্ধি, অনুভূতি আগামী দিনে দেশের রণনীতি তৈরিতে সাহায্য করবে৷ 

তিনি বলেন, যে কোনও সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন৷ আর সঠিক সময়ে ভারতের লকডাউনের সিদ্ধান্ত করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সাহায্য করেছে৷ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ ভবিষ্যতে যখনই করোনার বিরুদ্ধে ভারতের এই লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উঠবে, তখন উঠে আসবে এক যোগে আমাদের এই লড়াইয়ের কথাও৷ 

প্রধানমন্ত্রী আরও একবার বলেন, করোনা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ যখন চিন্তাভাবনা পর্যন্ত শুরু করেনি, তখন থেকেই ভারত এর সঙ্গে মোকাবিলার জন্য তৈয়ারি শুরু করে দিয়েছিল৷ তিনি বলেন, প্রতিটি ভারতবাসীর জীবন বাঁচাতে আমরা দিন রাত কাজ করেছি৷ 

প্রধানমন্ত্রী জানান, গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার ভারতীয় বিদেশ থেকে ভারতে ফিরেছে৷ লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন৷ সড়ক, রেল, জল এবং আকাশ পথ প্রায় সবটাই খুলে গিয়েছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও, ভারতে করোনা সংক্রমণ তেমন দাপট দেখাতে পারেনি৷ ভারতে সুস্থ হওয়ার হার ৫০ শতাংশেরও বেশি৷ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম৷ 

এদিকে, ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। খুলে গিয়েছে প্রায় সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস। এক মাস ধরে চলবে এই আনলক-ওয়ান। কিন্তু এই আনলক-ওয়ান পর্বে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরেই জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন,  আমরা আত্মবিশ্বাসী, ক্ষতির পরিমাণ সীমিত রেখে দ্রুত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বদল আনতে পারব৷ করোনা সংক্রমণ রুখতে অবশ্যই মাস্ক বা ফেস কভারের ব্যবহার করতে হবে৷ এই সময় মাস্ক বা ফেস কভার ছাড়া ঘর থেকে বেরনোর চিন্তা করাটাও উচিত নয়৷ মেনে চলতে হবে দুই গজের দূরত্ব৷ বারবার হাত ধুতে হবে৷ স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে৷ নিজের ও পরিবারের বাচ্চা  ও বৃদ্ধদের সুরক্ষার জন্য এই অভ্যাস বজায় রাখতে হবে৷ 

আনলক ওয়ানে সক্রিয় হচ্ছে অর্থনীতি৷ রাস্তায়-বাজারে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ এই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা সংক্রমণ রোখা সম্ভব হবে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা করোনাকে যতটা প্রতিরোধ করতে পারব, আমাদের অর্থব্যবস্থা  তত বেশি করে চালু হবে৷ বাড়বে উপার্জন৷ নিয়ম মেনে চললে করোনা সঙ্কটের মোকাবিলা করা খুব সহজ হবে৷ করোনার মোকাবিলায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই প্রকল্পে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্পের মালিকরা সুবিধা পাচ্ছেন বলে এ দিন দাবি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন বহু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে কৃষকরা উপকৃত হবেন৷ আর কৃষকরা লাভবান হলে চাহিদা বাড়বে৷ নমো জানান, এই বছর মে মাসে রায়ায়নিক সারের বিক্রি গত বছরের তুলনায় দুই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই বছর খারিফ শস্যের উৎপাদনও  গত বছর তুলনায় ১২-১৩ শতাংশ বেশি হয়েছে৷ টু হুইলার গাড়ির উৎপাদন লকডাউনের আগের স্তরের পর্যায়ের প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে৷ খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল পেমেন্ট লকডাউনের পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে৷ 

লাগাতার তিন মাসে রফতানির ঘাটতির পর জুন মাসে আবার তা কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে গিয়েছে৷ একাধিক রাজ্যে কৃষি, হর্টিকালচার, মৎস্যচাষ এবং এমএমএমই-র বড় অংশ রয়েছে৷ ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এর ফলে ক্ষুদ্র ও কূটির শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এমএসএমই-ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 20 =