মুম্বই: করোনা আবহে মানুষের মননে জন্ম নিয়েছে এক নয়া ছুঁৎমার্গ৷ মানুষের প্রতি মানুষের মনে শুধুই সন্দেহের আনাগোনা৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বারবার উঠে এসেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর৷ হেনস্থা হতে হয়েছে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা চিকিৎসক, নার্স সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের৷ চারিদিকে যখন শুরু হয়েছে করোনার ছুঁৎমার্গ, তখন এই ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়রদের পরিষেবা দিয়ে চলেছেন মুম্বইয়ের এক নাপিত৷
লকডাউনের জেরে দোকানপাট থেকে শুরু করে বন্ধ ছিল সমস্ত সেলুন৷ কিন্তু এর মাঝেই করোনা বিরোধী যোদ্ধাদের পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন বাণিজ্যনগরীর বছর ৪০ এর নাপিত সন্তোষ অনন্ত বোরহাদে৷ সেই মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়া থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের চুল, দাড়ি কাটছেন তিনি৷
স্যান্ডহার্স্ট রোড স্টেশনের কাছে সোহম নামে একটি সেলুন রয়েছে সন্তোষের৷ এক সময় দিনে প্রায় ১০ জনের চুল কাটতেন তিনি৷ লকডাউনের কাজ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন৷ সন্তোষ বলেন, ‘‘করোনা অতিমারির জেরে যখন সেলুন, বিউটি পার্লার সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন আমি একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম৷ কারণ এর প্রভাব পড়েছিল আমার উপার্জনে৷ সেই সময় দেখলাম কী ভাবে চিকিৎসক এবং পুলিশকর্মীরা দিনরাত এক করে দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন৷ তাঁদের দেখে আমারও মনে হল সমাজের জন্য কিছু করা উচিত৷ সেই থেকেই শুরু৷’’
সাধারণ চুল কাটা এবং শেভিং-এর জন্য ৮০ টাকা করে নিতেন সন্তোষ৷ কিন্তু করোনা যোদ্ধাদের বিনা পয়সাতেই পরিষেবা দিচ্ছেন তিনি৷ সন্তোষ বলেন, ‘‘মুম্বই পুলিশ খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ৷ অফিসারদের সামনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে তাঁরা উপস্থিত হন৷ চিকিৎসকদেরও চুল কাটা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ বড় চুল থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ তাই তাঁদের সেবায় এগিয়ে আসি আমি৷’’
এখন প্রতিদিনই নিয়মিতভাবে জেজে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং পুলিশ কর্মীদের ফোন আসে তাঁর কাছে৷ এক এক সময় সকাল থেকে কাজ শুরু করেন সন্তোষ৷ কাজ শেষ হতে সন্ধে গড়িয়ে যায়৷ দিনে প্রায় ২০ জন ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারের চুল দাড়ি কাটেন তিনি৷ তবে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলে এই কর্মযজ্ঞ৷
এসিপি (ডঙ্গরি ডিভিশন) অবিনাশ ধর্মাধিকারী বলেন, ‘‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই পরিষেবার বিনিময়ে কোনও কিছু দাবি করেন না সন্তোষ৷ লকডাউনে চুল কাটানোর জন্য যখন নাপিতের খোঁজ করছিলাম, তখন দেখলাম সকলে চারগুণ বেশি দাম হাঁকছে৷ সই সময় সন্তোষের কথা জানতে পারি৷ যে কিনা বিনামূল্যেই চুল-দাড়ি কেটে চলেছেন৷’’